
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগে এক দশক পর অবশেষে বরখাস্ত করা হলো রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা রাখী চক্রবর্তীকে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরকারি চাকরি থেকে চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, রাখী চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে চলমান বিভাগীয় মামলার রায়ে বরখাস্তের আদেশ জারি করে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ও শৃঙ্খলা শাখা। আদেশটি গত ২ জুলাই জারি হয় এবং ৮ জুলাই তা রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছায়।
আদেশে বলা হয়েছে, "সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুসারে তার বিরুদ্ধে আনা অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হলো।" এ সঙ্গে তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশটিও বাতিল করা হয়েছে।
ঘটনার পেছনের কাহিনি
২০১৫ সালে রাখী চক্রবর্তী বোয়ালিয়া থানার শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ৪০ জন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার নম্বর ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন করে তাদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
তদন্তে প্রমাণিত হয়, ফলাফল সংক্রান্ত গোপন নথি, নম্বর ফর্দ ও কম্পিউটার তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় তার অনুমতি ছাড়া ফলাফল পরিবর্তন সম্ভব ছিল না। অভিভাবকদের অভিযোগ এবং গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।
তদন্তে তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর মধ্যে রাখী চক্রবর্তীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত, তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় এবং আরেক কর্মচারী সোনিয়া রওশনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল আন্দোলনের মুখে সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হলে ৪০ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়। এর মধ্যে ৩০ জন ট্যালেন্টপুল ও ১০ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিলেন। রাজশাহী নগরীর শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তিও বাতিল হয়। অভিযোগ রয়েছে, এই স্কুলটিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সন্তানরা পড়তো।
বৃত্তির অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
রাখী চক্রবর্তীর মন্তব্য
বিষয়টি নিয়ে রাখী চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, "এ বিষয়ে এখন কথা বলতে ইচ্ছুক নই।"