
বগুড়ার আদমদীঘিসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ধানের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। জিরাশাইল ও কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৫০০ ও ১৭০০ টাকা মণ দরে। এমন দামে ধান বিক্রির নজির অনেক পুরোনো ব্যবসায়ীরাও আগে দেখেননি। অথচ, এই বাড়তি মূল্যের একফোঁটাও পাচ্ছেন না কৃষকরা। কারণ, কৃষকের ঘরে এখন আর ধান নেই—সব কিনে নিয়েছে মহাজন ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ধান কাটার মৌসুম শেষে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই মধ্যস্বত্বভোগীরা ও বড় মহাজনরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদ করে রেখেছেন। এখন বাজারে সেই ধান চড়া দামে বিক্রি করে তারা বিপুল মুনাফা করছেন।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ধান ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আদমদীঘির ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, “এত দাম জীবনে প্রথম দেখলাম। এক মণ জিরাশাইল ধান বিক্রি করছি ১৫০০ টাকায়, আর কাটারি ধান ১৭০০ টাকায়।” তিনি জানান, গত বছর একই ধান সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায় কেনা হয়েছিল।
অন্যদিকে, কৃষক আলিম উদ্দিন জানান, “গত বছর লোকসানে ধান বিক্রি করেছি। তাই এবার আবাদ কম করেছি। কিন্তু এখন দেখি ধানের দাম আকাশছোঁয়া। অথচ আমার ঘরে আর ধান নেই। প্রতিবছরই দেখি, যখন আমাদের ঘরে ধান থাকে তখন দাম কম। আর যখন দাম বাড়ে, তখন ধান নেই। আমাদের কষ্টের ফসল থেকে লাভ তুলে নেয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।”
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে যে মান ও শর্ত পূরণ করতে হয়, তা অনেক কৃষকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেইসঙ্গে ধান কেনার সরকারি প্রক্রিয়া ধীরগতির হওয়ায় বহু কৃষক আর্থিক চাপে পড়ে দ্রুত ধান বিক্রি করে দেন। এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগীরা কম দামে ধান কিনে গ্রেডিং করে পরে বেশি দামে সরকারি গুদামে সরবরাহ করেন।
এভাবেই প্রতিবছর কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য থেকে। আর তাদের ঘামে ভেজা ধানের প্রকৃত লাভ চলে যাচ্ছে বাজার নিয়ন্ত্রণকারী বড় মহাজন ও মজুদদারদের পকেটে।