বাংলাদেশে প্রথমবার মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর শুমারি: বগুড়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা | Daily Chandni Bazar বাংলাদেশে প্রথমবার মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর শুমারি: বগুড়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩ আগস্ট, ২০২৫ ০৩:৩৮
বাংলাদেশে প্রথমবার মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর শুমারি: বগুড়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে প্রথমবার মাঠপর্যায়ে গবাদিপশুর শুমারি: বগুড়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা

বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক স্তম্ভ হলেও, এই খাতের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের অভাবে নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো বগুড়া জেলার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার উদ্যোগে গবাদিপশুর মাঠ পর্যায়ের শুমারি (পরিসংখ্যান) সম্পন্ন হয়েছে — যা প্রাণিসম্পদ তথ্য ব্যবস্থাপনায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
 
পরিসংখ্যানহীনতার সমস্যায় প্রাণিসম্পদ খাত
 
বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) প্রকাশিত তথ্যের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই ফারাক দেখা যায়। এর ফলে যেমন সরকার সঠিকভাবে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে পারে না, তেমনি খামারিরাও বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। সঠিক ও হালনাগাদ তথ্যের অভাবে গবাদিপশুর সংখ্যা, রোগব্যাধির প্রকোপ, উৎপাদন হার বা বাজারে চাহিদা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
 
উপরোল্লেখিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বগুড়া জেলার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোঃ আনিছুর রহমান এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেন বলে জানা গেছে।
 
বগুড়া জেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগ সম্প্রতি মাঠপর্যায়ে (১২ টি উপজেলার) একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণিসম্পদ শুমারি কার্যক্রম পরিচালনা করেছে মাত্র ০৪ মাসের মধ্যে।
 
উক্ত পরিসংখ্যানের কার্যক্রমের বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগিসহ প্রাণিসম্পদের প্রকৃত সংখ্যা ও অবস্থা নির্ধারণ করে গবাদিপশুর বাণিজ্যিক খামারিসহ মাঠ পর্যায়ে গবাদিপশু পালনকারীদের নির্ভুল ডাটাবেজ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাগণ তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীগণের সাহা্য্যে শুধুমাত্র মটিভেশনের মাধ্যমে সম্পাদন করেছে, এর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়নি। মাঠপর্যায়ে এই ধরণের কার্যক্রম এই প্রথম, যা জাতীয় পর্যায়ে একটি রোল মডেল হতে পারে।
 
জরিপ ও প্রযুক্তির সমন্বয় জরুরি
 
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু শুমারি করলেই চলবে না, বরং নিয়মিত জরিপ এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য হালনাগাদ রাখাও জরুরি। আগামীতে পরিসংখ্যান তৈরির সময় মোবাইল অ্যাপ, ড্রোন ও ডিজিটাল ডাটা এন্ট্রি সিস্টেম ব্যবহার করলে দ্রুত ও নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এতে শুধু পরিসংখ্যান নয়, রোগব্যাধির পূর্বাভাস দেয়া যেমন সহজ হবে ঠিক তেমনি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ত্বরান্বিত করা যাবে।
 
বাজার ব্যবস্থাপনায় এই পরিসংখ্যান কেমন ভূমিকা রাখবে
 
প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের পাশাপাশি বাজারজাতকরণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে চাহিদা ও যোগানের সঠিক চিত্র না থাকায় অনেক সময় খামারিরা উৎপাদিত পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। সঠিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনা যেমন আরও পরিকল্পিত হবে, তেমনি খামারিরাও পাবেন পণ্যের ন্যায্য মূল্য।
 
বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাঃ
 
সঠিক তথ্যের ভিত্তিতেই গঠন করা যায় কার্যকর ও টেকসই নীতিমালা। বগুড়ায় তৈরি পরিসংখ্যানের আলোকে জাতীয়ভাবেও প্রাণিসম্পদ পরিসংখ্যান তৈরি করা এখন সময়ের দাবি এবং এই কাজে প্রাণিসম্পদ খাতে আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন FAO ও OIE-এর সহযোগিতায় সমন্বিত পরিসংখ্যান কাঠামো গড়ে তোলা গেলে তা জাতীয় নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।
 
প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতার প্রয়োজনঃ
 
প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সফলতা অর্জনের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। তবে, এই কার্যক্রমের পরিকল্পনাও নির্ভর করে সঠিক পরিসংখ্যানের উপর। কোন এলাকায় কী ধরণের খামার বেশি, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে—এই তথ্য জানা থাকলেই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হবে ফলপ্রসূ।
 
প্রাণিসম্পদ পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বগুড়া জেলার এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, মাঠপর্যায়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ সম্ভব এবং কার্যকর। এখন প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে এই উদ্যোগকে সম্প্রসারিত করা এবং একটি সমন্বিত, আধুনিক ও টেকসই তথ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। সঠিক পরিসংখ্যানই হতে পারে প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি।
 
শেষ কথাঃ তথ্যই শক্তি-এ কথা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই কথার যথার্থ প্রয়োগ হলে প্রাণিসম্পদ খাতও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম ভিত্তি