ক্ষেতলালে দুইটি হিমাগার থেকে ৩৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ | Daily Chandni Bazar ক্ষেতলালে দুইটি হিমাগার থেকে ৩৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:৫৪
ক্ষেতলালে দুইটি হিমাগার থেকে ৩৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ
উপজেলা সংবাদদাতা, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাটঃ

ক্ষেতলালে দুইটি হিমাগার থেকে ৩৫ হাজার বস্তা আলু গোপনে বিক্রি করেছে কর্তৃপক্ষ

 জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার দুইটি হিমাগার থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে গোপনে ৩৫ হাজার বস্তা আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে হিমাগার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। 

হিমাগারে সংরক্ষিত আলু তুলতে এসে আলু বিক্রির বিষয়টি জানতে পারেন ভুক্তভোগী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ঘটনাটি নিজে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা।

হিমাগার দুটি হলো ক্ষেতলাল পৌর এলাকার ভাসিলা মোল্লা হিমাগার লিমিটেড ও একই উপজেলার আয়মাপুরের হাফিজার রহমান বীজ হিমাগার। এর মধ্যে ভাসিলা মোল্লা হিমাগার ৩০ হাজার বস্তা ও হাফিজার রহমান হিমাগার প্রায় ৫ হাজার বস্তা আলু কৃষকদের না জানিয়ে বিক্রি করেছে।

 শনিবার সরেজমিনে ওই হিমাগারে গিয়ে আলু বিক্রির ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। এখন হিমাগারগুলো বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী কৃষক ও ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে বিষয়টি রফাদফা করার চেষ্টা করছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ। আর যাঁরা বীজ আলু হারিয়েছেন, তাঁদের হিমাগারের নিজস্ব বীজ আলু থেকে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

 মোল্লা হিমাগারে গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষণ করা আলু না পেয়ে কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের কক্ষে ভিড় করছেন। এ সময় কৃষকেরা হিমাগারের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। ভুক্তভোগী কয়েকজন কৃষক জানান, তাঁরা মোল্লা  হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। ১৫ নভেম্বর সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হবে। আজ আলু নিতে এলে প্রথমে হিমাগার কর্তৃপক্ষ তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখেন। পরে এক মাস আগে হিমাগার থেকে একাধিক কৃষক  ও ব্যবসায়ীর ৩০ হাজার বস্তা আলু বিক্রির কথা  জানানো হয়।

মোল্লা  হিমাগারে ১৭০০ বস্তা আলু রেখেছিলেন ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামের  ব্যবসায়ী আহসান হাবিব বাবু ও শাজিদ তাঁরা আলু তুলতে এসে জানতে পারেন, তাদের আলু এক মাস আগে গোপনে বিক্রি করা হয়েছে। বাবু বলেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ আমাকে আলু বিক্রির বিষয়টি আগে জানায়নি। এ ছাড়া আলু সংরক্ষণের মেয়াদ ছিল। এর মধ্যে ২৬৪ বস্তা বীজ আলু ছিল। 

ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি  কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি হিমাগারের বিরুদ্ধে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আলু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কৃষকদের না জানিয়ে আলু বিক্রি করা অপরাধ। বিষয়টি তিনি নিজে তদন্ত করছেন। তিনি জানান, মোল্লা হিমাগার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ৩০ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছে। এখন তাঁদের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

মোল্লা হিমাগারের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, যেসব ব্যবসায়ীর অনেক বেশি আলু সংরক্ষিত আছে, তাঁদের অনুমতি নিয়ে অর্ধেক আলু বিক্রি করেছেন তাঁরা। বিক্রি করা আলুর পরিবর্তে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। কতজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা বড় বড় ৪৫ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে আলু বিক্রি করেছি।

অন্যদিকে হাফিজার রহমান বীজ হিমাগারের ব্যবস্থাপক বেলাল সরদা বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের রাখা ৪ হাজার ৮০০ বস্তা আলু বিক্রি করেছি। সংরক্ষণের মেয়াদ শেষের আগে কেন বিক্রি করলেন জানতে চাইলে বলেন, হিমাগারে অনেক বেশি আলু ছিল। আগে আলু বিক্রি না করলে শেষ পর্যন্ত সব আলু হিমাগার থেকে বের করা কষ্টসাধ্য হবে বলে না জানিয়ে কিছু আলু বিক্রি দিয়েছি। এখন ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হিমাগার মালিকদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছি, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ নভেম্বরের ১৫ তারিখের আগে যেন কোনো কৃষকের আলু বিক্রি না করে। এখন যাঁরা আলু বিক্রি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।