চায়না কমলার ডালে ঝুলে আছে স্বপ্ন, শেরপুরে বিদেশি ফল চাষে বড় সাফল্য | Daily Chandni Bazar চায়না কমলার ডালে ঝুলে আছে স্বপ্ন, শেরপুরে বিদেশি ফল চাষে বড় সাফল্য | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:৫৬
চায়না কমলার ডালে ঝুলে আছে স্বপ্ন, শেরপুরে বিদেশি ফল চাষে বড় সাফল্য
এনামুল হক, শেরপুর, বগুড়া থেকে

চায়না কমলার ডালে ঝুলে আছে স্বপ্ন, শেরপুরে বিদেশি ফল চাষে বড় সাফল্য

কয়েক বছর আগের কথা। তখন ঢাকায় ছাত্রজীবন কাটাচ্ছিলেন মাসুদুর রহমান। ফলের প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক, বিশেষ করে কমলার প্রতি। ইউটিউবের ভিডিও দেখে একদিন ঢাকা থেকেই নিয়ে এলেন একটি কমলার চারা। যত্নে লালন করলেন, ফলও ধরল কিন্তু টক! তাতেই থেমে যাননি তিনি। শুরু হলো নতুন এক স্বপ্নের যাত্রা।
 
খোঁজ পেলেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের নিধিকুণ্ডু গ্রামের এক সফল কমলা বাগানের। সেখানে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করলেন ৫০টি চাইনিজ জাতের ছোট কমলার চারা। ১৪ শতক জমিতে, বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারখান্দি ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে, রোপণ করলেন নতুন আশার চারা।
 
উনারা বলেছিলেন, দুই বছরের মাথায় ফলন পাওয়া যাবে। ঠিক তেমনটাই হলো। প্রথমে পাঁচটি গাছে ফল এলো, আর তার মধ্যেই দেখা মিলল হলুদ রঙের, রসালো ও মিষ্টি কমলার। উৎসাহ দ্বিগুণ হলো মাসুদুর রহমানের। যত্ন-পরিচর্যা আরও বাড়ালেন, কৃষিবিদদের পরামর্শ নিলেন।
 
দ্বিতীয় বছরেই দেখা দিল সফলতা। ১৯টি গাছে পর্যাপ্ত ফলন হলো, বিক্রি করলেন প্রায় ২৬ হাজার টাকার কমলা। পরের বছর সেই আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার টাকায়। এবার আগের গাছ গুলোতে ফলও এসেছে ভালো। এখন তার বাগানে রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫টি গাছ। নিজ হাতে ডাল কলম করে আরও গাছ বাড়িয়েছেন। নতুন গাছগুলোতে আগামী বছর ফল আসবে বলে আশা করছেন তিনি।
 
মাসুদুর রহমান বলেন,
“১৪ শতক জমিতে অন্য ফসল করলে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। কিন্তু কমলা চাষে সেখানে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করা সম্ভব। তাই আমি বাগানটা আরও বড় করছি।”
 
তিনি জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ভারতের কাশ্মীর থেকে আপেল ও আঙুরের চারা এনে রোপণ করেছেন। আপেল গাছ এখন বেশ বড় হয়েছে, যদিও আঙুরের গাছ এখনও ছোট।
 
গত রবিবার সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা যায়, শিবপুরের এই শিক্ষক এখন স্থানীয় কৃষকদের অনুপ্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু। তার বাগান দেখতে প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন।
 
বাগান পরিদর্শন শেষে শেরপুর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মামুন আহমেদ বলেন,
“তাকে দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন কমলা চাষে। এটা আমাদের দেশে বিদেশি ফলের বাগানের এক অনন্য উদাহরণ। এতে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে, তেমনি আমদানি নির্ভরতা কমবে।”
 
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হায়দার বলেন,
“তিনি নিজ উদ্যোগে এই বাগান করেছেন, কোনো সরকারি প্রণোদনা ছাড়াই। বাগান ও ফলন দুটোই প্রশংসনীয়। তার দেখাদেখি আরও অনেকে বিদেশি ফল চাষে উৎসাহ পাবেন। আমরা পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করব।”
 
শিবপুর গ্রামের মানুষ এখন গর্ব করে বলেন, তাদের গ্রামেই হয়েছে শেরপুরের প্রথম সফল কমলা বাগান। আর এই বাগানের গল্প যেন এক সাধারণ শিক্ষকের অদম্য পরিশ্রম ও সবুজ স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।