বগুড়ার গাবতলীর দূর্গাহাটা এলাকায় সমাজ উন্নয়ন কর্ম (সার্ক) নামে একটি সমবায়ভিত্তিক সঞ্চয় সমিতির বিরুদ্ধে গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলার শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত সঞ্চয় সংগ্রহের পর সম্প্রতি হঠাৎ কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে নেমে এসেছে হতাশা–ক্ষোভ–আতঙ্ক। জমা রাখা অর্থ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জমার টাকা ফেরত চাইলে হুমকি—আমেনা বেগমের হৃদয়বিদারক গল্প
সারিয়াকান্দির হাট ফুলবাড়ি হরিনা উত্তরপাড়া গ্রামের মাটি কাটার শ্রমিক আমেনা বেগম জানান, কঠোর পরিশ্রমের টাকা অধিক মুনাফার আশায় সার্ক সমিতিতে জমা করেন তিনি। নির্ধারিত সময় পার হলেও টাকা ফেরত না পেয়ে অফিসে গেলে তাকে ঘুরিয়ে ফেরানো হয় এবং একপর্যায়ে হুমকিও দেওয়া হয়। টাকার শোকে তিনি স্ট্রোক করে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন এবং এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
২২ লাখ ৯ হাজার টাকা জমা, পরে উল্টো মামলা
একই গ্রামের ভুক্তভোগী মো. তারেক জানান, তিনি ডিপিএস আকারে ২২ লাখ ৯ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন। মেয়াদ শেষে টাকা চাইলে কর্মকর্তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো তারেকের বিরুদ্ধেই চেকdishonor মামলার মাধ্যমে হয়রানি শুরু হয়।
প্রবাসীর সঞ্চিত টাকাও নেই নিরাপদ
আরেক ভুক্তভোগী, এক প্রবাসীর স্ত্রী জানান—বিদেশে থাকা স্বামীর কষ্টার্জিত ৩০ লাখ টাকা পাঁচ বছরের ডিপিএসে জমা দেন। কিন্তু মেয়াদ শেষেও টাকা ফেরত মেলেনি; বরং সমিতির কর্মকর্তা তারেকসহ কয়েকজনের মাধ্যমে নানান হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
কারা এই সার্ক সমিতির পেছনে?
রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১২৫০/০৭ ইং—নিবন্ধিত এই সমিতিটি দীর্ঘদিন ধরে দূর্গাহাটা এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। গ্রাহকদের অভিযোগ,
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম স্বপন,
উপপরিচালক মো. ছামছুল আলম,
ব্যবস্থাপক মো. আইয়ুব আলী লিটন,
হিসাবরক্ষক মো. রাসেল মিয়া,
সহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের সঞ্চিত টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অফিস হঠাৎ গুটিয়ে নেয়, নৈশপ্রহরীও বঞ্চিত
সমিতির নৈশপ্রহরী শ্রী লক্ষী চন্দ্র মালী জানান, চাকরিরত অবস্থায় তিনি ও তাঁর পরিবার মিলে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৫ টাকা জমা রেখেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ অফিস সরিয়ে পরিচালক স্বপনের মাটিয়ানচড়া এলাকার বাসায় নেওয়া হয়। এরপর টাকা চাইতে গেলে তাকে বারবার তালবাহানা, ভয়ভীতি এবং সময়ক্ষেপণের মুখে পড়তে হয়।
সমাজসেবা অফিস বলছে—নিবন্ধন স্থগিত, অভিযোগে হবে তদন্ত
গাবতলী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওবায়দুল হক বলেন,
“আমি নতুন যোগদান করেছি। সার্ক সমিতির বিষয়ে আগে অবগত ছিলাম না। তবে যতটুকু জেনেছি, সমিতির নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি এলাকাবাসীর
এলাকাবাসী বলছে, সার্ক সমিতির মাধ্যমে ঘটানো এই অর্থ কেলেঙ্কারি শুধু আর্থিক প্রতারণাই নয়, বরং বহু পরিবারকে পথে বসিয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ বিপর্যয়। দ্রুত তদন্ত, দায়ীদের গ্রেপ্তার এবং গ্রাহকদের জমা রাখা কোটি কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।