অগ্রহায়ণে পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা | Daily Chandni Bazar অগ্রহায়ণে পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১৯ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:১০
অগ্রহায়ণে পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা
মোঃমোয়ান্নাফ হোসেন শিমুল

অগ্রহায়ণে পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা

 

অগ্রহায়ণ মাসের আগমনে শুরু হয়েছে গ্রামাঞ্চলের প্রাণের নবান্ন উৎসব। কৃষকের ঘরে উঠছে নতুন ধান, আর সেই আনন্দকে ঘিরে পিঠা-পায়েস ও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত নবান্ন উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে বসেছে এক দিনের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। ভোর ৪টা থেকে দিনব্যাপী চলে মাছ কেনা-বেচার এই উৎসব।

সরকারি ক্যালেন্ডার নয়—পুঁথিগত প্রথা ও পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণের প্রথম দিন পাঁচশিরা বাজারে বসে এই বৃহৎ মাছের মেলা। প্রায় ১০৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ মেলাকে কেন্দ্র করে মেয়ের জামাই ছাড়াও এলাকার সব বয়সী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

ভোরের কুয়াশা ভেদ করে সূর্যের আলো ফুটতেই জমে ওঠে মেলার পরিবেশ। শীত উপেক্ষা করে ভোর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎসুক মানুষের ঢল নামে মেলায়। স্থানীয় নদী, দীঘি ও পুকুরের স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছেই ভরে ওঠে মেলা। প্রথা অনুযায়ী, এ দিনে জামাইরা প্রতিযোগিতার মতো মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। তাই প্রতিটি দোকানে সাজানো ছিল রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, বাঘাইর, সিলভার কার্পসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

স্থানীয় প্রবীণরা জানান, নতুন ধান কাটার আনন্দে কৃষকের ঘরে নতুন চাল দিয়ে প্রথম রান্না উপলক্ষে এ নবান্ন উৎসব। মেয়ে-জামাই ও আত্মীয়দের আমন্ত্রণ করে পাড়া-মহল্লা জুড়ে চলে উৎসবের আমেজ—পিঠা-পুলি, পায়েস, ক্ষীর, খই, মুড়িসহ নানা আয়োজন। আর তারই অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় জেলার অন্যতম বড় এই মাছের মেলা।

মেলার আগে থেকেই মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন আড়ত থেকে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করেন। কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতি নেওয়া হয় মেলাকে কেন্দ্র করে। এ বছর মেলায় ৩ কেজি থেকে ৩৫ কেজি ওজনের বিভিন্ন মাছ দেখা গেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, লোকসমাগম বেশি হলেও আগের তুলনায় বিক্রি কিছুটা কম, ফলে লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।

মেলায় এবার সর্বোচ্চ ৩৫ কেজি ওজনের একটি সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হয়েছে ৪২ হাজার টাকায়। ১৯ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয় ২৫ হাজার টাকায়।

মাছ ব্যবসায়ী নাজির হোসেন বলেন, “কাতলা, রুই, মৃগেল ৭০০ থেকে দেড় হাজার টাকা কেজিতে, আর বাঘাইর ও চিতল ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মাছ ৩০০–৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা কম থাকায় বিক্রি আশানুরূপ হয়নি।”

মাছ কিনতে আসা জিন্দাপুরের আলাউদ্দীন জানান, “গতবারের তুলনায় মাছের আমদানি বেশি হলেও দাম বেশ চড়া।”

মাত্রাই থেকে মাছ কিনতে আসা জুয়েল হোসেন বলেন, “প্রতি বছরই মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিদের জন্য মাছ কিনতে হয়। এ বছর প্রায় পাঁচ হাজার টাকায় ১০ কেজির একটি সিলভার কার্প কিনেছি। বাড়ি গেলে নাতিরা খুব খুশি হবে।”

কালাই টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুল ইসলাম ফিতা বলেন, “মেলা বেশ জমজমাট। তবে কৃষকদের আলুর দাম কম থাকায় কেনাকাটা কিছুটা প্রভাবিত হয়েছে।”

কালাই হাট ইজারাদার আব্দুল আলীম সরকার বলেন, “জয়পুরহাট ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা এখানে মাছ নিয়ে আসেন। এ বছর বাজার স্বাভাবিক, তাই সবাই মাছ কিনতে পারছে।”

কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম জানান, “নবান্ন উৎসব উপলক্ষে পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলা শুধু কেনা-বেচা নয়, মানুষের আনন্দের একটি বড় আয়োজন। বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যায় এখানে। মৎস্যচাষে আগ্রহী করতে আমরা চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এই মেলার পরিধি আরও বাড়বে।”