কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামে নারীদের উন্নয়নের চাকা | Daily Chandni Bazar কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামে নারীদের উন্নয়নের চাকা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ০০:১৬
কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামে নারীদের উন্নয়নের চাকা
ফজলুর রহমান, নন্দীগ্রাম, বগুড়া

কুমড়া বড়ি বানিয়ে ঘুরছে নন্দীগ্রামে নারীদের উন্নয়নের চাকা

শীতের রোদে কুমড়া বড়ি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। ছবি- সংবাদদাতা

শীতের কোমল রোদ ঝকমক করে উঠেছে। কুয়াশা ভোরের আকাশ থেকে সরে যেতে না যেতেই নন্দীগ্রামের গ্রামীণ আঙিনাগুলোতে শুরু হয়ে যায় এক মৌসুমি উৎসব। উঠোনজুড়ে ছড়িয়ে রাখা হাজারো কুমড়া বড়ি। বাতাসে ডালের মিষ্টি গন্ধ, নারীদের দ্রুত হাতের কারুকাজ, সব মিলিয়ে যেন এক শিল্পের কর্মশালা।
বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় শীতকাল মানেই কুমড়া বড়ি তৈরির ব্যস্ততম সময়। এই মৌসুমি খাবারটি শুধু স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয় গ্রামের হাজারো নারীকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের সুযোগ, দিয়েছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শক্তি।
কুমড়া বড়ির ইতিহাস দীর্ঘ। ধারণা করা হয়, একসময় দেশের অভিজাত হিন্দু সম্প্রদায়ের রান্নাঘরে মাসকালাই বা খেসারি ডালের মিহি পেস্ট এবং কুমড়ার মিশ্রণে তৈরি এই বিশেষ বড়িটি প্রথম জনপ্রিয়তা পায়। ধীরে ধীরে তা বাংলাদেশের গ্রামীণ বাড়িগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এখন শীতকালীন প্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে কুমড়া বড়ির নাম অবধারিতভাবেই উঠে আসে। নন্দীগ্রাম উপজেলায় এই খাবারের চাহিদা এতই বেশি যে অনেকেই বছরের দুই মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কুমড়া বড়ি তৈরির ওপর নির্ভর করে পুরো বছরের আয়ের একটি অংশ সুরক্ষিত রাখেন। নন্দীগ্রামের নামুইট, চানপুর, কল্যাণগর, নুন্দহ, কয়াপাড়া, হাটধুমা, চাকলমাসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম। ভোররাত থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি,
আগে ডাল রোদে শুকানো হয়। পরে সেগুলো ভেঙে পরিষ্কার করে ৩–৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।
এরপর শিল-পাটায় ডাল বাটার কাজ শুরু হয়।
শেষ ধাপে নারীরা নানা আকারে দিয়ে কুমড়া বড়ি বানিয়ে রোদে শুকান। রোদে শুকাতে এক থেকে দুই দিন লাগে। তারপরই বড়িগুলো বাজারে বিক্রি উপযোগী হয়। গড়ে প্রতিদিন একজন নারী কারিগর তিন কেজি ডালের বড়ি বানাতে পারেন। এতে তাদের ভালো একটি উপার্জন হয়। শীতের দুই মাসের এ আয় অনেক নারীর কাছেই স্বাবলম্বিতা ও সাহসের উৎস। হাটধুমা গ্রামের হাসিখুশি নারী শাহানারা বেগম দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তার মুখেই শোনা গেল এই শীতকালীন শিল্পের সাফল্যের গল্প। “মাসকালাইয়ের আসল কুমড়া বড়ি আমরা প্রতি কেজি ২৫০–৩০০ টাকায় বিক্রি করি। একটু কম মানেরটি ১৮০–২০০ টাকা। শীতের দুই মাসেই যত বড়ি বানাই, তা সারা বছর বিক্রি হয়। আল্লাহর রহমতে সংসারে ভালোই চলে।” তিনি জানান, শুধু নন্দীগ্রাম নয় আশপাশের থানা, উপজেলা এমনকি দূরাঞ্চল থেকেও পাইকাররা এসে বড়ি কিনে নিয়ে যান। ফলে বিক্রি নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুলতানা আক্তার বানু বলেন “এখন নন্দীগ্রামের গ্রামের বধূরা খুব আগ্রহ নিয়ে কুমড়া বড়ি তৈরি করছেন। তারা ঘরে বসেই মৌসুমি খাবার তৈরি করে সংসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন। অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের দক্ষতা আরও বাড়াতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, কুমড়া বড়ি এখন শুধু একটি পারিবারিক খাবার নয় এটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণের উদাহরণ হয়ে উঠছে।