শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা। হঠাৎ ভবন দুলে উঠলে আতঙ্কে রাস্তায় বের হয়ে আসে হাজারো মানুষ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকায় তিনজনের মৃত্যু
রাজধানীর পুরান ঢাকার কসাইটুলি এলাকায় পুরোনো একটি ভবনের রেলিং ধসে পড়লে তিনজন পথচারী ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতরা হলেন—
রাফিউল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী
সবুজ (৩০)
এক শিশুসহ আরও একজন (৮ বছর বয়সী)
তারা সড়ক দিয়ে হাঁটার সময় হঠাৎ রেলিং ভেঙে পড়ে। নিহতদের মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে নবজাতকের মৃত্যু
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পের সময় রাস্তার পাশের দেয়াল ভেঙে পড়ে নবজাতক ফাতেমা মারা যায়। শিশুটির মা কুলসুম বেগম ও প্রতিবেশী জেসমিন বেগম গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দ্রুত তাদের হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নরসিংদীতে আহতের সংখ্যা সর্বাধিক
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থল নরসিংদী হওয়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শহরের গাবতলী এলাকায় নির্মাণাধীন ছয়তলা ভবনের দেয়াল ধসে পাশের একতলা বাড়ির ওপর পড়ে। এতে বাড়ির মালিক দেলোয়ার, ছেলে ওমর ও মেয়ে তাসফিয়া গুরুতর আহত হন। দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. গুলশানা কবির জানান, অর্ধশতাধিক আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এবং নতুন রোগীরা আসছেন।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন
ভূমিকম্পের কম্পনে পলাশের ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জাতীয় গ্রিড সাবস্টেশনে আগুন লাগে।
পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান,
“ভূমিকম্পের অভিঘাতেই সাবস্টেশনে আগুন লাগে। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামতের কাজ চলছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর: আহত শতাধিক
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য—
ঢাকা মেডিকেল কলেজ: ১০ জন
গাজীপুর তাজউদ্দীন মেডিকেল: ১০ জন
নরসিংদী জেলায়: ৫৫ জন
অন্যান্য জেলা: আরও বহু আহত
মোট আহতের সংখ্যা শতাধিক বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা: “এটি বড় ভূমিকম্পের আগাম বার্তা”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পূরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও ভূমিকম্প গবেষক মেহেদি আহমেদ আনসারী বলেন—
“বড় ভূমিকম্প আসার আগে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। আজকের কম্পন সেই সম্ভাবনার আগাম বার্তা।”
তিনি আরও বলেন—
বাংলাদেশ অঞ্চলে ১০০ থেকে ১৫০ বছর পরপর বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি থাকে।
গত ১৫০ বছরে মাত্র একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছে।
ফলে আরেকটি বড় ভূমিকম্প কাছাকাছি সময়ে হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন নির্মাণের প্রবণতার সমালোচনা করে বলেন—
“অপরিকল্পিত ভবনে ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হবে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম এসব শহর ঝুঁকিপূর্ণ।”
মানুষের মধ্যে আতঙ্ক
ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে
কর্মীরা অফিস থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসে,
স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা মাঠে আশ্রয় নেয়,
অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটে।
নরসিংদী, ঢাকা ও গাজীপুরে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।