বগুড়ায় বেতনভুক্ত হকার বাহিনী: রাস্তাজুড়ে ভ্যান, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী | Daily Chandni Bazar বগুড়ায় বেতনভুক্ত হকার বাহিনী: রাস্তাজুড়ে ভ্যান, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:১৬
বগুড়ায় বেতনভুক্ত হকার বাহিনী: রাস্তাজুড়ে ভ্যান, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক

বগুড়ায় বেতনভুক্ত হকার বাহিনী: রাস্তাজুড়ে ভ্যান, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

বগুড়া শহরের অলিগলি থেকে প্রধান সড়ক—সবখানেই দিনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে ভ্যানে পণ্য বিক্রি করা হকারদের দখলদারিত্ব। তবে এই হকারদের অধিকাংশই প্রকৃত হকার নন, বরং বিভিন্ন মার্কেটের দোকানদারদের বেতনভুক্ত কর্মচারী—এমন তথ্য উঠে এসেছে চাঁদনী বাজারের প্রতিনিধির অনুসন্ধানে।

১০ থেকে ১২টি ভ্যান—একেকজন দোকান মালিকের বেতনভুক্ত হকার বাহিনী

গোপন অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা যায়—

কারো রয়েছে ৭টি,

কারো ১০টি,

আবার কারো ১২টি ভ্যান,
যেগুলোতে বেতনভুক্ত কর্মচারীরা প্রতিদিন রাস্তায় ভ্যান বসিয়ে দোকান মালিকদের জন্য আয় করছেন কয়েক লাখ টাকা।

একজন হকারকে দিনে মাত্র ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। ভ্যানে বিক্রিত পণ্যের পুরো মুনাফাই যায় দোকান মালিকের পকেটে।

রিপোর্টার সেজে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

পরিচয় গোপন করে আমাদের একজন প্রতিবেদক একটি হকার ভ্যানের কাজ নেওয়ার চেষ্টা করলে জানা যায়—
শহরের বড় মার্কেটগুলো, বিশেষ করে শাপলা মার্কেট, আমলাপাড়া, চান্দমারী ও চাঁদনী বাজার এলাকার একাধিক দোকান মালিক এভাবে ভ্যান ব্যবসা চালান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিয়োগকারী লোক আমাদের প্রতিবেদককে জানায়—
“ভ্যান দিতে সমস্যা নেই, প্রতিদিন ৫০০ টাকার বেতন। বিক্রির সব লাভ দোকান মালিকের।”

দোকান মালিক রুহুল আমিনের স্বীকারোক্তি

পরবর্তীতে পাওয়া এক ফোন নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হলে শাপলা মার্কেটের ‘রুহুল আমিন বস্ত্রালয়’–এর মালিক রুহুল আমিন স্বীকার করেন—
“আমার ৯টা ভ্যান আছে।”
তিনি আরও দাবি করেন—
“ট্রাফিক পুলিশ ধরলেও হকারদের কিছু বলে না। কাপড় আটকালে দুই–তিন দিনের মধ্যেই ছাড়িয়ে দেওয়া যায়।”

থানার গেটেও ভ্যান! তীব্র যানজটে জর্জরিত শহরবাসী

সারেজমিন দেখা গেছে—

থানামোড়ের মতো সংবেদনশীল এলাকায়, খোদ থানার গেটের সামনেও ভ্যান বসিয়ে চলছে বেচাকেনা।

দত্তবাড়ি থেকে সাতমাথা পর্যন্ত অর্ধেক রাস্তাজুড়ে ভ্যান বসে থাকে প্রতিদিন।
এতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পথচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন—
“এরা গরিব হকার নয়, দোকান মালিকদের বাহিনী। পেছনে বড় লোকদের যোগসাজশ আছে বলেই রাস্তায় ইচ্ছেমতো ভ্যান বসাতে পারে।”

নেশাগ্রস্তদের ভ্যান দিয়ে ব্যবসা চালানোর অভিযোগ

অনুসন্ধানে জানা গেছে—
অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কিছু দোকান মালিক নেশাগ্রস্ত লোকজনের হাতেও ভ্যান তুলে দেন
ফলে তারা অনেক সময় পথচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, যা আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ

হকারদের লাগামহীন দৌরাত্ম্যের জন্য পথচারীরা দায়ী করেন—

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে,

দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে,

এবং অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে হকারদের অবৈধ দখলদারিত্বকে।

ট্রাফিক পুলিশের মন্তব্য

বগুড়া ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন—
“নগরবাসী এখন ৪৫০ হকারের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। হকারদের দখলদারিত্ব থেকে মানুষকে মুক্ত করতে আমরা চেষ্টা করছি।”

তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে।