স্টেশন রোড যেন ‘মিনি পতিতালয়’—অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনতার গণবিস্ফোরণ, চার হোটেলে তালা | Daily Chandni Bazar স্টেশন রোড যেন ‘মিনি পতিতালয়’—অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনতার গণবিস্ফোরণ, চার হোটেলে তালা | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ২৩:৪৪
স্টেশন রোড যেন ‘মিনি পতিতালয়’—অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনতার গণবিস্ফোরণ, চার হোটেলে তালা
উপজেলা সংবাদদাতা, আদমদীঘি, বগুড়া

স্টেশন রোড যেন ‘মিনি পতিতালয়’—অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ জনতার গণবিস্ফোরণ, চার হোটেলে তালা

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার শহরের স্টেশন রোডের অর্ধডজন আবাসিক হোটেল দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে—এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে চারটি হোটেলে।

গত রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয়দের সংগঠিত পদক্ষেপে পলাশ বোর্ডিং, মাসুসিতা হোটেল, সান্তাহার বোর্ডিং এবং শুভ বোর্ডিং—এই চার প্রতিষ্ঠানের দরজায় তালা ঝুলে যায়। এলাকাবাসীর দাবি, পুলিশ প্রশাসনের নীরবতা ও সহযোগিতার কারণেই এসব অবৈধ ব্যবসা বছরের পর বছর ধরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

দেহ ব্যবসা, মাদক ও জুয়ার আসর—সব চলছে একই জায়গায়

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব হোটেলে প্রতিদিন দিন-রাত অবাধে চলে দেহ ব্যবসা। হোটেলগুলোর এই নৈতিক অধঃপতনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন—ম্যানেজার আজাদ, বাবু, ফরিদ, এমদাদসহ কয়েকজন। শুধু দেহ ব্যবসাই নয়, একই হোটেলে নিয়মিত চলছে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসর।
স্থানীয়দের দাবি, “স্টেশন রোডের এই হোটেলগুলো এখন মিনি পতিতালয়। যুব সমাজ ধ্বংস হচ্ছে। অথচ পুলিশ চুপ।”

যাত্রীদের টার্গেট করে প্রতারণা

অভিযোগ রয়েছে—ট্রেনযাত্রীদের বিভিন্ন অজুহাতে হোটেলে ডেকে নিয়ে গিয়ে হোটেলকর্মীরা তাদের সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়। অনেক যাত্রী বিষয়টি সম্মানের ভয়ে বা ঝামেলায় জড়াতে না চেয়ে প্রকাশও করেন না, ফলে হোটেলগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

কলেজগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগও পুরনো

হোটেলের পাশ দিয়ে সান্তাহার সরকারি কলেজের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী যাতায়াত করে। এলাকাবাসীর দাবি, হোটেলের কর্মচারীরা প্রায়ই কলেজগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। বহুবার অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

প্রেসক্লাবের সামনে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিব্রত সাংবাদিকরাও

স্টেশন রোডের মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে সান্তাহার প্রেসক্লাবের অফিস হওয়ায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যক্তি প্রায়ই এলাকায় আসেন। হোটেলগুলোর অশোভন পরিবেশে তাদেরও চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
এ নিয়ে একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

‘সুনিল’কে ঘিরে নতুন অভিযোগ—প্রতিদিন হোটেল থেকে টাকা তোলা

স্টেশন রোডের কয়েকজন দোকানদার জানান—সান্তাহার শহর পুলিশের নিয়োগ করা সুনিল নামের এক ব্যক্তি প্রতিদিনই এই হোটেলগুলো থেকে টাকা সংগ্রহ করেন।
দোকানদারদের ভাষ্য—
“সুনিল প্রতিদিন টাকা তোলে—এটা এলাকায় সবার জানা কথা। তার কারণে হোটেলগুলো আরও বেপরোয়া।”

পুলিশকে জানিয়েও প্রতিকার না পেয়ে জনতার ‘স্বেচ্ছা অভিযান’

স্থানীয় মালশন গ্রামের বাসিন্দা স্বপন হোসেন বলেন—
“হোটেলে চলা অনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বহুবার পুলিশকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়েই জনতা তালা দিয়েছে।”

নাগরিক কমিটির ক্ষোভ: ‘শহরের হৃদয়ে এমন নোংরামি লজ্জাজনক’

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সদস্য ও সাবেক অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন—
“শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন পতিতালয়সদৃশ পরিবেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আমাদের জন্য অপমানজনক। প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

পুলিশ প্রশাসনের অবস্থান—টাউন ইন্সপেক্টর ফোন ধরেননি

বিষয়টি জানতে সান্তাহার টাউন পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন গ্রহণ করেননি।