সলঙ্গায় খুন–ধর্ষণ–চুরি বেড়ে উদ্বেগ, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ | Daily Chandni Bazar সলঙ্গায় খুন–ধর্ষণ–চুরি বেড়ে উদ্বেগ, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০০:৫৪
সলঙ্গায় খুন–ধর্ষণ–চুরি বেড়ে উদ্বেগ, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ
জিএম স্বপ্না,সলঙ্গা, সিরাজগঞ্জঃ

সলঙ্গায় খুন–ধর্ষণ–চুরি বেড়ে উদ্বেগ, আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার বিভিন্ন এলাকায় খুন, ধর্ষণ, চুরি ও নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাত নামলেই থানা সদরের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন এলাকার জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ও অপরাধের ঘটনায় আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

তবে পুলিশ বলছে, খুন–ধর্ষণ–চুরি প্রতিরোধে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এবং অপরাধ দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক যেসব ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে সলঙ্গা থানার বিভিন্ন ইউনিয়নে ধারাবাহিকভাবে খুন, চুরি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

গরু চুরি: গত সেপ্টেম্বর ধুবিল ইউনিয়নের আমশড়া গ্রামে আব্দুস সাত্তারের ৪টি ও আব্দুল মালেকের ২টি গরু চুরি হয়। থানায় জিডি করলেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ।

১০টি গরু এক রাতেই উধাও: ১৪ সেপ্টেম্বর রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক জিল্লুর রহমানের গোয়াল ঘর থেকে ১০টি গরু চুরি হয়। এ ঘটনার শোকে জিল্লুর রহমান স্ট্রোক করেন এবং এখনও অসুস্থ অবস্থায় রয়েছেন। ফলে স্থানীয় গরুর মালিকরা রাত জেগে পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্কুলছাত্রীর মৃত্যু: ৬ সেপ্টেম্বর অলিদহ গ্রামে আফরিন জাহান যুথি নামে এক স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। যদিও পরিবার ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করেছে, এলাকাজুড়ে এ নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে।

অটোভ্যান চালকের নিখোঁজ ও মৃত্যু: ৫ আগস্ট জীবিকার তাগিদে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন অটোভ্যানচালক আমিনুল ইসলাম। ১৮ অক্টোবর চকনিহাল গ্রামের একটি ডোবা থেকে তার হাড়–গোড় উদ্ধার করে পুলিশ। পোশাক দেখে পরিবার মরদেহ শনাক্ত করে।

স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা: ৮ অক্টোবর জীবনপুর গ্রামের ১৩ বছরের স্কুলছাত্রী মিম ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। আঙ্গারু এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

গ্রাম পুলিশ সদস্য খুন: ১১ অক্টোবর সলঙ্গা হাইস্কুল সংলগ্ন পুকুরপাড় থেকে গ্রাম পুলিশ সদস্য আন্না রানীর (৩৮) শ্বাসরোধে হত্যা করা লাশ উদ্ধার হয়।

শতবর্ষী নারীকে নৃশংস হত্যা: ২২ অক্টোবর চকবুরু–ভেংড়ি গ্রামে নেশার টাকা না পেয়ে নেশাগ্রস্ত নাতি সজীব (২২) তার শতবর্ষী দাদিকে কুপিয়ে হত্যা করে।

গরু ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার: ১২ নভেম্বর ফুলজোড় নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এক লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিচয় মেলে—নলকার চর ফরিদপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ খতিব (৩৫)।

শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা:

৩০ আগস্ট মাসুয়াকান্দি গ্রামে ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে ৭০ বছরের আব্দুস সামাদ।

২৪ সেপ্টেম্বর চড়িয়া শিকার মাঠপাড়ায় ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করে হাবিবুর রহমান নামে ৭০ বছরের এক ব্যক্তি।

এমন ধারাবাহিক অপরাধে স্থানীয় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। থানার সামনে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিও হয়েছে। তবে অনেক মামলার আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি সলঙ্গা থানা পুলিশ। যদিও জেলা ডিবি পুলিশের অভিযানে কিছু হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশি টহল জোরদারের দাবি

স্থানীয়রা জানান, টহল ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় অপরাধীরা সুযোগ পাচ্ছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম–বাজারে ভয় ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা—নবাগত সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার সলঙ্গার সামগ্রিক আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি বিশেষ নজর দেবেন।