সিসিটিভিতেও মুখ নেই, নেই এনআইডি—তবু ফাঁদে পড়ল আয়েশা: দুই খুনের রহস্য উন্মোচন | Daily Chandni Bazar সিসিটিভিতেও মুখ নেই, নেই এনআইডি—তবু ফাঁদে পড়ল আয়েশা: দুই খুনের রহস্য উন্মোচন | Daily Chandni Bazar
logo
প্রকাশিত : ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২৩:০৮
সিসিটিভিতেও মুখ নেই, নেই এনআইডি—তবু ফাঁদে পড়ল আয়েশা: দুই খুনের রহস্য উন্মোচন
নিজস্ব প্রতিবেদক

সিসিটিভিতেও মুখ নেই, নেই এনআইডি—তবু ফাঁদে পড়ল আয়েশা: দুই খুনের রহস্য উন্মোচন

বৃহস্পতিবার [১১ ডিসেম্বর] দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, গত ৮ ডিসেম্বর সকালে লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে হত্যা করা হয়। নতুন গৃহকর্মী আয়েশাকে প্রথম থেকেই সন্দেহ করা হলেও তাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা ছিল পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র তিন দিন আগে আসা এই গৃহকর্মীর কোনো ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা ব্যক্তিগত তথ্য পরিবারের কাছে সংরক্ষিত ছিল না। সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে স্পষ্ট চেনা যায়নি, কারণ সে সবসময় বোরকা পরে মুখ ঢেকে চলাফেরা করত।

‘ম্যানুয়াল’ তদন্তেই মিলল হত্যাকারীর খোঁজ

ডিজিটাল কোনো সূত্র না পাওয়ায় তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ পদ্ধতিতে গত এক বছরে গৃহকর্মীদের মাধ্যমে সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা শুরু করে। গলায় পোড়ার দাগ, আচরণগত মিল এবং জেনেভা ক্যাম্প এলাকার গৃহকর্মীদের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে পূর্বের একটি চুরির মামলার পুরোনো মোবাইল নম্বর হাতে আসে।

নম্বরটির কল ডেটা বিশ্লেষণে উঠে আসে রাব্বি নামের এক ব্যক্তির নাম। তদন্তে নিশ্চিত হওয়া যায়—এই রাব্বির স্ত্রীই পলাতক গৃহকর্মী আয়েশা। তার শারীরিক বর্ণনাও বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামে দাদা-শ্বশুরবাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

হত্যার দায় স্বীকার, চাঞ্চল্যকর বিবরণ দিল আয়েশা

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। পুলিশকে সে জানায়—

চাকরিতে যোগদানের দ্বিতীয় দিনই সে দুই হাজার টাকা চুরি করে।

চুরির অভিযোগ নিয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজের সঙ্গে তর্কের একপর্যায়ে তিনি স্বামীকে ফোনে জানাতে চাইলে, আয়েশা আগে থেকে লুকিয়ে রাখা সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে পেছন থেকে আঘাত করে।

ধস্তাধস্তির মধ্যে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে লায়লা আফরোজ মারা যান।

এ সময় মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে নাফিসা এগিয়ে গেলে তাকেও নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে।

ইন্টারকমে কল করতে চাইলে মূল তার ছিঁড়ে ফেলে আয়েশা।

পরে নিজের রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

ঢাকা ছাড়ার পথে সিংগাইর ব্রিজের কাছে মোবাইল ও পোশাকভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেয়।

অতিরিক্ত কমিশনার আরও জানান, আয়েশার আগে থেকেই চুরির প্রবণতা ছিল এবং সে নিজের বোনের বাড়িতেও অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করেছিল।

গৃহকর্মী নিয়োগে সতর্ক থাকার আহ্বান

ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে নজরুল ইসলাম বলেন,
“আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন, তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। পরিচয়পত্র ও সুপারিশকারীর তথ্য সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এটি আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত।”