ভারত–পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবিনিময়ে দুই পক্ষে হতাহত
ভারতের বিমান হামলার পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ও রাতে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাগুলি হয়েছে।
গোলাগুলিতে পাকিস্তানে দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের পাঁচ সেনা আহত হয়েছে। দুই পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পত্রিকা ডন–এর খবরে বলা হয়, কাশ্মীর সীমান্তের নাকিয়াল সেক্টরে গতকাল ভারতীয় মর্টারের গোলায় দুই শিশুসহ পাঁচ পাকিস্তানি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের কর্মকর্তারা। আহত হয়েছে আরও কয়েকজন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্তরেখা বরাবর পাকিস্তান মর্টারের গোলা নিক্ষেপ ও গুলি চালিয়েছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, অন্তত ৫০ জায়গায় এমন গোলা বর্ষণ হয়েছে। এতে আখনুর সেক্টরে পাঁচ ভারতীয় সেনা আহত হয়েছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীও জোরালো জবাব দিয়েছে।
এর আগে সীমান্তে গতকাল সন্ধ্যায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয় বলে জানান ভারতের এক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র। তিনি বলেন, কোনো উসকানি ছাড়াই ভারতীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কাশ্মীরের নওশেরা সেক্টরে গুলি চালায় পাকিস্তান। ভারতীয় সেনারা এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জওয়ান নিহত হওয়ার জবাবে গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ঢুকে বিমান হামলা চালায় ভারত। এতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। পুলওয়ামায় ওই আত্মঘাতী হামলার দায় স্বীকার করেছিল জইশ-ই-মুহাম্মদ।
তবে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। তবু অনাবশ্যক এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব যথাসময়ে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি। সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ডন–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোররাতে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের হামলার পর গতকাল জরুরি বৈঠকে বসে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ভারত অপ্রয়োজনীয় আগ্রাসন চালিয়েছে। এর জবাব পাকিস্তান তার সুবিধাজনক সময়ে দেবে। সম্ভাব্য সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থেকে দেশের সশস্ত্র বাহিনীসহ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ডন–এর অন্য এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যা কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সবাই প্রস্তুত। এখন আমাদের জবাব দেখার জন্য ভারতের অপেক্ষার পালা।’
এর আগে সকালের দিকে বেশ কয়েকটি টুইট করেন জেনারেল আসিফ গফুর। এর সঙ্গে কয়েকটি ছবিও দেন। তিনি দাবি করেন, ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো মুজাফফরাবাদ সেক্টর দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়লেও পাকিস্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। মাত্র তিন-চার মাইল ভেতরে তারা আসতে পেরেছিল। পাকিস্তানি বিমানবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে বালাকোটের কাছে ফাঁকা জমিতে বোমা ফেলে তড়িঘড়ি তারা পালিয়ে যায়। গফুর বলেন, ওই হামলায় কোনো অবকাঠামোর বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি। কেউ হতাহতও হয়নি।
ভারতের হামলার পর অর্থমন্ত্রী আসাদ উমর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খাট্টাকের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। এ সময় তিনি বলেন, ভারত আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে। আত্মরক্ষার অধিকার পাকিস্তানের আছে। এ ঘটনার জবাব দেওয়া হবে। পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ জানানোর দুঃসাহস ভারতের না দেখানোই ভালো।
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন নীতি’ বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে উদ্যোগী হবে তাঁর দেশ। ভারত যে জায়গায় আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে, সেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে নিয়ে যাওয়া হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল (আজ বুধবার) ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটির (এনসিএ) বিশেষ বৈঠক ডাকবেন। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত থাকবে।
ভারত অবশ্য এবারই প্রথম পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে অভিযান পরিচালনা করল না। দুই বছর আগে কাশ্মীরের উরি সেক্টরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় পদাতিক বাহিনী ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। ওই অভিযানে একাধিক জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল নয়াদিল্লি। পাকিস্তান তখনো বলেছিল, কোনো হামলা হয়নি, ক্ষতিও হয়নি।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আলিফ আলভি বলেছেন, ‘আমরা জানি কীভাবে নিজেদের রক্ষা করতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিতে হয়, তা বিশ্বকে শেখাতে পারে আমাদের সেনাবাহিনী। কাজেই এই অঞ্চল ও অন্য কোথাও কেউ যেন একথা না ভাবে যে তারা আমার দেশের ক্ষতি করতে পারে।’
বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগের (এন) নেতা শাহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘ভারত যদি যুদ্ধ করতে চায়, তাহলে নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের পতাকা উড়বে।’ আর দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা আসিফ আলী জারদারি বলেছেন, ‘ভারত যেন মনে না করে যে পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ নীতিই তাদের দুর্বলতা। নির্বাচনে জেতার জন্য মোদি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারেন না।