প্রকাশিত : ২ মার্চ, ২০১৯ ১৯:১৮

সেই পাইলটকে নিয়ে এখন কী করবে ভারত?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সেই পাইলটকে নিয়ে এখন কী করবে ভারত?
ভারতের বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানকে গতকাল ফেরত দিয়েছে পাকিস্তান। ছবি: রয়টার্স।

ভারতের মাটিতে পা রেখেছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়া ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমান। গতকাল রাতে পাকিস্তান তাদের ‘শান্তি বার্তা’র নিদর্শন হিসেবে তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করেছে। ভারতের মাটিতে পা রেখে অভিনন্দন তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘নিজের দেশে ফিরতে পেরে দারুণ লাগছে।’ তবে ভারতের মাটিতে নামার পরও তাঁকে অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে ভারতের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া নয়টার দিকে অভিনন্দনকে পাকিস্তান ফিরিয়ে দেয়। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতীয় এই পাইলটকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দুই দফায় সময় পরিবর্তন করে পাইলটকে হস্তান্তর করা হয়। শুরুতে পাঁচটার দিকে তাঁকে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই এই বিলম্ব হয়েছে বলে জানানো হয়। শুক্রবার সকালে প্রথমে ইসলামাবাদ থেকে বিমানে লাহোরে আনা হয় তাঁকে। সেখান থেকে সড়কপথে ওয়াঘা রওনা হয় পাক রেঞ্জার্সের কনভয়। সঙ্গে ছিলেন এয়ার অ্যাটাশে জে ডি কুরিয়ন। অভিনন্দনকে নিয়ে ওয়াঘা সীমান্তে ঢোকে কনভয়। তারপর সীমান্তের কাস্টমস অফিসে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে নথিপত্র যাচাইয়ের কাজ। সেখানেই একপ্রস্থ শারীরিক পরীক্ষা হয় অভিনন্দনের। তাঁকে চা খেতে দেয় পাকিস্তানি রেঞ্জার্স। ফেরত দেওয়া হয় অভিনন্দনের সার্ভিস রিভলবারও। ওয়াঘা সীমান্তেই কেটে যায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রসের মাধ্যমে প্রত্যর্পণের ব্যবস্থা করতে হয়। তার জন্য প্রয়োজন বিস্তর নথিপত্র তৈরির কাজ। বন্দীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ অবস্থায় ফেরানো হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতেই তৈরি হয় নথিপত্র। নো ম্যানস ল্যান্ড পেরিয়ে ভারতে ফেরার পর আটারি সীমান্তে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিরা। সেখান থেকে সড়কপথে তাঁকে অমৃতসর বিমানবন্দরে নেওয়া হয় এবং বিশেষ বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয় অভিনন্দনকে। ভারতীয় নিউজ ১৮ অনলাইনের খবরে বলা হয়, অভিনন্দনকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে নেওয়ার কথা। সেখানে তাঁকে নানা রকম শারীরিক পরীক্ষা দিতে হবে। তাঁর শরীর পুরোপুরি স্ক্যান করা হবে। পাকিস্তানি কোনো গোপন নজরদারির যন্ত্র তাঁর শরীরে বসানো হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। তাঁকে নানা রকম মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা দিতে হবে। ভারতের ইনটেলিজেন্স বুরোর সামনে তাঁকে সব কথা খুলে বলতে হবে। তবে মানসিক ধকল কাটাতে এখন ওই জিজ্ঞাসাবাদের পর্বটি করা হবে কি না, তা নিশ্চিত করা হয়নি। এর আগে পাকিস্তান অভিনন্দনকে জিজ্ঞাসাবাদের যে ভিডিও প্রকাশ করেছিল তাতে তাঁকে মানসিকভাবে শক্ত বলেই মনে হয়েছে।
বুধবার পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) প্রকাশিত ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওই বৈমানিক চা পান করছেন আর নিজের নাম-পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছেন। পাকিস্তানের দৈনিক ডন অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি নিজের নাম অভিনন্দন ও বাড়ি দক্ষিণ ভারতে বলে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এখানে আমি সুচিকিৎসা পাচ্ছি।...ভারতেরও উচিত এমন পথ অনুসরণ করা।’ ভিডিওতে কেউ একজন বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছেন আটক পাইলটকে। ওই ব্যক্তিকে পাইলট বলছেন, তিনি এখানে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পর হেরফের করবেন না। পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে খুব ভালোভাবে দেখাশোনা করছেন। আটক পাইলট প্রশ্নকর্তাকে মাঝেমধ্যে ‘মেজর’ বলে সম্বোধন করেন। যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার পরমুহূর্ত সম্পর্কে ভারতীয় পাইলট বলছেন, ‘পাকিস্তানি সেনারা আমাকে বিমান বিধ্বস্তের স্থান থেকে উদ্ধার করে। এরপর সেনা কর্মকর্তাদের একটি ইউনিটে আমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আমি আমার সেনাদের কাছেও এমন আচরণ প্রত্যাশা করি। আমি পাকিস্তানি সেনাদের ব্যবহারে অভিভূত।’

ভিডিওতে প্রশ্নকর্তা ও আটক পাইলটের কথোপকথন ছিল এমন—
প্রশ্নকর্তা: আপনার বাড়ি ভারতের কোথায়? 
আটক পাইলট: দক্ষিণ ভারতে। 
প্রশ্নকর্তা: আপনি বিবাহিত? 
পাইলট: হ্যাঁ, বিবাহিত। 
প্রশ্নকর্তা: আমার ধারণা, চা আপনার পছন্দ? 
পাইলট: এই চা-টা খুবই চমৎকার, ধন্যবাদ। 
প্রশ্নকর্তা: আপনি কোন এয়ারক্রাফট চালাচ্ছিলেন? 
পাইলট: দুঃখিত মেজর, আমি এ বিষয়টি খোলাসা করতে পারছি না। তবে আমি নিশ্চিত আপনি বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখে ইতিমধ্যেই তা জেনেছেন।

প্রশ্নকর্তা: (এই বিমান হামলায়) আপনার কী উদ্দেশ্য (মিশন) ছিল? 
পাইলট: দুঃখিত, আমাদের (সেনা) পক্ষে এ বিষয়টি (যুদ্ধসংক্রান্ত তথ্য) বলা সম্ভব নয়।

শুরুতে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বৈমানিক ধরা পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও পাকিস্তানের ভিডিও প্রকাশের পর স্বীকার করে নেয় ভারত। পরে তাঁকে ছাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। ভারতের দাবি, শুক্রবার রাতে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী অভিনন্দনকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তান বলছে, শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে তাদের এ উদ্যোগ।

উপরে