‘সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার’

উইকিলিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে সমালোচনা। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন অনেকে।
তাকে গ্রেপ্তার করা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন চিন্তাবিদ ও বিশ্লেষক নোম চমস্কি। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতেই অ্যাসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাকে তুলে দেয়ার শঙ্কার কথা জানিয়ে এই বিশ্লেষক বলেন, ঋণ মওকুফের শর্তে ইকুয়েডর সরকার তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে।
অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসকে গুপ্তচরবৃত্তির কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছিলেন বলে দাবি করে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লেনিন মোরেনো বলেন, অ্যাসাঞ্জকে দেয়া আশ্রয় প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্তে অন্য কোনো দেশের প্রভাব নেই। তবে, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবী।
অ্যাসাঞ্জ তার কার্যক্রমের মাধ্যমে শরণার্থীর নিয়মনীতি ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ মোরেনোর। এছাড়া সম্প্রতি অ্যাসাঞ্জের শরীর অবস্থাও খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না বলেও ইকুয়েডর প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে উঠে আসে।
তবে ৪৭ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ভয়ানক সব অভিযোগ পাতানো হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী। অ্যাসাঞ্জ তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সুইডেনের নারী নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে ২০১২ সাল থেকে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন অ্যাসাঞ্জ। গত বুধবার ইকুয়েডর সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক আশ্রয় চুক্তি বাতিলের পর বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। একইদিন জামিনের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করেন ব্রিটেনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন অ্যাসাঞ্জ। অভিযোগ প্রমাণ হলে এক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তার।
এদিকে, মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে অ্যাসাঞ্জকে তুলে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ নিয়ে আগামী ২ মে যুক্তরাজ্যের আদালতে শুনানি হবে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ গোপন নথি ফাঁস করে হইচই ফেলে দেয় উইকিলিকস। এরপর ওই বছরই অস্ট্রেলীয় নাগরিক অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। গ্রেপ্তার এড়াতে ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্য পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ২০১১ সালে অ্যাসাঞ্জকে সুইডেনের হাতে তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন যুক্তরাজ্যের একজন বিচারক।
কিন্তু অ্যাসাঞ্জের আশঙ্কা ছিল, সুইডেন তাকে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই তুলে দেবে এবং সেখানে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। এই আশঙ্কা থেকে ২০১২ সালে জামিনে থাকা অবস্থায় লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর থেকে গত প্রায় সাত বছর সেখানেই ছিলেন তিনি।