প্রকাশিত : ২২ এপ্রিল, ২০১৯ ১৮:২০

প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে শ্রীলঙ্কার রক্তাক্ত সকাল

অনলাইন ডেস্ক
প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে শ্রীলঙ্কার রক্তাক্ত সকাল

গতকাল শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের ফলে নিহত হয়ছে ২৯০ জন। বোমা বিস্ফোরণে শ্রীলঙ্কার আকাশে বাতাসে শুধুই উড়তে থাকে পুড়ে যাওয়া ছাই। আর ভেসে আসে পুড়া লাশের গন্ধ। হোটেল কিংবা চার্চের দেয়ালে লেগে রয়েছে রক্ত আর রক্ত। স্বজন হারানোর বেদনায় ভারী হয়ে ওঠে দেশটির আকাশ-বাতাশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানিতে শ্রীলঙ্কার রক্তাক্ত সকালের এরকম দৃশ্যই ওঠে আসে।

সাংগ্রি লা হোটেলে হামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি ভানুকা হরিশচন্দ্র। একটি মিটিংয়ে যোগদান করার জন্য দেরী করে আসছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে বিলাসবহুল সাংগ্রি-লা হোটেলে পিছনের প্রবেশপথ দিয়ে একটি গাড়ি তাকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন তিনি বুঝতে পারলেন কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। আশেপাশের মানুষ তাকে ভিতরে যেতে নিষেধ করতেছিল। তারা বলছিল এইটা নিরাপদ নয়। তিনি যখন হোটেলর সামনে আসলেন তখন দেখতে পারলেন হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি। সাধারণ মানুষদের দূরে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছিল। রক্ত ও অ্যাম্বুলেন্স সর্বত্র ছিল।

একটি প্রযুক্তি বিপণন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ভানুকা হরিশচন্দ্র (২৪) টেলিফোনে জানান, এটি ভয়ে চমকিত হওয়ার মতো একটি অবস্থা। আমি এটি কিছুক্ষণের জন্যও সহ্য করতে পারিনি। 

সাংগ্রি-লা হোটেলে আক্রমণের পর তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সিনাম্যান গ্র্যান্ড হোটেলে যাওয়ার। তিনি মনে করেছিলেন এই হোটেলটি তার জন্য নিরাপদ হতে পারে। কিন্তু সিনাম্যান গ্র্যান্ড হোটেলে প্রবেশর কিছুক্ষণ আগেই আরো একটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তিনি। 

বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনার পরেই মানুষ তাকে দূরে সড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। বিস্ফোরণের ফলে তার সোয়েটারের ওপর কালি ও ছাই পড়তেছিল। এই ঘটনার পর তিনি এই স্থান ছেড়ে চলে যান এবং অন্য বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা নিশ্চিত হয় এইটা যেনে যে তাদের বন্ধুরা নিরাপদ ছিলো।  

এই ঘটনার আরো একজন প্রত্যক্ষদর্শী এন. এ. সুমনপালা। তিনি সেন্ট এন্থনির শৃাইনের কাছাকাছি একটি দোকানে কাজ করতেন। বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শুনার সাথে সাথে তিনি আহতদের সাহায্য করার জন্য ভিতরে প্রবেশ করেন। ভিতরে রক্তের নদী দেখতে পান তিনি। তুষারের মতো ছাই পড়ার দৃশ্য দেখতে পানি তিনি।

সাংগ্রি-লা হোটেলের ১৭ তলায় থাকা একজন ফেসবুক পোস্টে জানান, সকাল ৮ টা ৫৭ মিনিটে কিছু একটি বিস্ফোরণে ফলে হোটেলটি ঝাঁকি দেয়। ফলে হোটেলের মধ্যে থাকা সবাই টেবিলের নিচে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। হোটেলে থাকা সকল অতিথিদেরকে দ্রুত সড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা যখন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছিলাম তখন দেখতে পেলাম চারদিকে প্রচুর পরিমাণে রক্ত। তখনো আমরা জানতাম না আসলে কী ঘটেছিলো।

শ্রীলংকানরা ২৬ বছরব্যাপী যুদ্ধকে ভালোভাবেই মনে রেখেছে। কিন্তু হরিশন্দ্র না। যখন ওই যুদ্ধটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যায় তখন তিনি একজন কিশোর। যুদ্ধ শেষে কলম্বোতে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। যখন তিনি বেড়ে উঠছিলেন, তার পিতামাতার নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন না। কিস্তু এখন আবারো সেই উদ্বেগ ফিরে এসেছে।

হরিশন্দ্র জানান, এটি একটি ভিন্ন পরিস্থিতি। তারা (হরিশন্দ্রের পিতামাতা) ভীত। কারণ এটি আবারো একটি জাতিগত সহিংসতা শুরু করতে পারে।

আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী এই ঘটনায় অন্তত ২৯০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো পাঁচ শতাধিক লোক। আর এই হামলার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবেদনে সন্দেহভাজন হিসেবে এক জঙ্গির নাম উঠে এসেছে। শ্রীলঙ্কায় সাংগ্রি-লা আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী এবং মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ইসলামি চরমপন্থী মৌলভী জহরান হাশিমকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

উপরে