প্রকাশিত : ২ জুলাই, ২০২১ ১৭:৪৭

উইঘুর ইস্যুতে চীনের পক্ষে ইমরান খান, প্রশংসা একদলীয় শাসনের

অনলাইন ডেস্ক
উইঘুর ইস্যুতে চীনের পক্ষে ইমরান খান, প্রশংসা একদলীয় শাসনের

পশ্চিমাবিশ্বে ইসলাম-ভীতি এবং কাশ্মীরি মুসলিমদের সঙ্গে ভারত সরকারের আচরণের বিরুদ্ধে বরাবরই জোরালো কণ্ঠস্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। কিন্তু চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের নিপীড়নের খবরে কখনোই প্রতিবাদী হতে দেখা যায়নি তাকে। এতদিন এ বিষয়ে কার্যত নীরবই ছিলেন তিনি। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে ঢের। কিন্তু এবার প্রকাশ্যেই উইঘুর ইস্যুতে চীনকে সমর্থন জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

তার কথায়, জিনজিয়াংয়ে কী হচ্ছে তা নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপচারিতা এবং পশ্চিমা মিডিয়া ও পশ্চিমা সরকারগুলোর কাছ থেকে আমরা যা শুনি তা পুরোপুরি আলাদা। যেহেতু চীনের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত শক্তিশালী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং আমাদের সম্পর্ক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে, তাই আমরা [বক্তব্যের] চীনা ধরনটাই গ্রহণ করব। তারা (চীন) জিনজিয়াংয়ের কর্মসূচির বিষয়ে যা বলবে, আমরা তা-ই মেনে নেব।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ইসলামাবাদ সফরে গিয়েছেন চীনা গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালেই বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন ইমরান খান। শুক্রবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, চীন সরকার জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক এবং বিস্তৃত নির্যাতন চালাচ্ছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ পরিস্থিতিকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করে ব্রেইনওয়াশ, নির্যাতন ও সাংস্কৃতিক পরিচয় মুছে ফেলার কথা জানিয়েছে।

তবে পশ্চিমা বিশ্বের এসব অভিযোগকে পাত্তা না নিয়ে ইমরান খান জানিয়েছেন, উইঘুর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে চীন সরকার যা বলছে, সেটাই তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য। শুধু তা-ই নয়, এদিন চীনের একদলীয় শাসনেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী।

চীনে প্রায় ৭২ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে সিপিসি। সেখানে শীর্ষনেতৃত্ব নির্ধারণে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা নেই। এরপরও এটিকেই সেরা শাসনব্যবস্থা বলে মনে হয়েছে ইমরান খানের

তার কথায়, সিপিসি একটি ইউনিক মডেল। এতদিন আমাদের বলা হয়েছে, সমাজ উন্নয়নের সেরা পথ হচ্ছে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু সিপিসি বিকল্প মডেল নিয়ে এসেছে। আর সেটি যেভাবে সমাজকে উন্নত করেছে, তাতে পশ্চিমের সকল গণতন্ত্রকেই হারিয়ে দিয়েছে।

২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া ইমরান খানের কাছে এখন মনে হচ্ছে, সংস্কারের প্রশ্নে নির্বাচনী গণতন্ত্র আপনাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে, সেই তুলনায় চীনা মডেল অনেক বেশি ‘নমনীয়’।

তিনি বলেন, এতদিন মনে হতো, নির্বাচনী গণতন্ত্রই হলো সেরা উপায়, যেখানে আপনি যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব পাবেন এবং এরপর নেতৃত্বকে জবাবদিহি করাবেন। তবে নির্বাচনী গণতন্ত্র ছাড়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আরও অনেক বেশি উন্নতি করেছে।

প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্ক। সম্প্রতি চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপিইসি) মাধ্যমে পাকিস্তানে ছয় হাজার কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে চীনারা। ইমরান খানের এমন বক্তব্যের পেছনে অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে