গাজার সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
গত মে মাসে গাজা সংঘাতের সময় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এবং ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, দু'পক্ষের মধ্যে সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। খবর বিবিসির।
এক তদন্তের পর মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর তিন দফা বিমান হামলায় যে ৬২ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে তার আশপাশে কোথাও সামরিক লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যদিও বলেছে, গাজায় তারা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তুতেই হামলা চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ৪ হাজার ৩শ'টি রকেট ছুঁড়েছে যা বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচার হামলাতেই পরিণত হয়েছে। ১১ দিনের লড়াইয়ে গাজায় কমপক্ষে ২৬০ জন এবং ইসরায়েলে ১৩ জন নিহত হয়।
জাতিসংঘ জানিয়েছে যে, গাজায় নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৯ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, সেখানে ২শ জঙ্গি ছিল। তবে গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা হামাস বলছে যে, তাদের ৮০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তদন্তে ইসরায়েলের চালানো তিনটি হামলার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে যে, ওই হামলাতেই সবচেয়ে বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবেদনে ওই তিন হামলার ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে-
১. বেইত হানুন, ১০ মে:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র চারটি বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে পড়লে সেখানে ৮ বেসামরিক নিহত হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে যে, ফিলিস্তিনি একটি রকেটের কারণে ওই বিস্ফোরণ হয়েছিল।
২. শাতি শরণার্থী শিবির, ১৫ মে:
প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি বোমা একটি তিনতলা ভবনে আঘাত হানলে তা ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০ জন বেসামরিক নিহত হয়। সেসময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ভেতরে হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে, তারা এরকম কারো উপস্থিতি সম্পর্কে জানতেন না।
৩. গাজা সিটি, ১৬ মে:
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-ওয়াহদা স্ট্রিটের কাছে সিরিজ বিমান হামলায় তিনটি বহুতল ভবন ধ্বংস করা হয়। এতে অন্তত ৪৪ জন বেসামরিক নিহত হয়। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা জঙ্গিদের ব্যবহৃত সুড়ঙ্গকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল এবং ভবন ধসে পড়ার ঘটনা অনাকাঙ্খিত ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনটি ঘটনাস্থলের কোনটির আশেপাশেই স্পষ্টত কোন সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছিল না এবং যে হামলা নির্দিষ্ট কোন সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশ্য করে করা হয় না তা বেআইনি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করার জন্য সব ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দরকার হলে হামলার আগেই সতর্কতা জারি করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তারা বিশেষভাবে সামরিক লক্ষ্যবস্তু লক্ষ্য করেই হামলা চালিয়েছিল এবং সংঘাতে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি কমাতে সম্মিলিত প্রচেষ্টাও করেছিল তারা।
তারা আরও বলতে চাইছেন যে, সামরিক বাহিনী সামরিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা বেসামরিক লোকদের আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল।
গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানায়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শুধু আগে থেকেই নাকচ করে দেয়া অভিযোগগুলোর দিকেই বার বার নজর দিচ্ছে। কিন্তু তারা হামাস এবং অন্য সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছে না যারা বসত-বাড়ি, মসজিদ ও স্কুল রয়েছে এমন এলাকায় গিয়ে হামলা চালাচ্ছে।
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে যে, ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো ইসরায়েলি শহর ও উপশহরগুলোর দিকে নির্বিচার রকেট নিক্ষেপ করে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে বা নির্বিচারে হামলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছে। হামাস এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে গণহত্যা সত্ত্বেও তারা বেসামরিক নাগরিকদের এড়িয়ে চলার চেষ্টাও করেছে।