কথায় নয়, কাজ দেখে তালেবানকে মূল্যায়ন
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, সবাইকে সাধারণ ক্ষমা এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ ভালো ভালো নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান। কিন্তু এতে ভরসা পাচ্ছে না পশ্চিমা বিশ্ব।
তারা বলছে, কথায় নয়- তালেবানের মূল্যায়ন হবে কাজে। তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতনের পর মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকে বসেন ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। পরে তারা এমন মন্তব্য করেন। এছাড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও একইরকম মন্তব্য করেছেন।
তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ তারা জোর করে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে।
এদিকে আফগান ইস্যুতে আগামী ২৪ আগস্ট বৈঠকে বসছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। একই ইস্যুতে জি-৭ সম্মেলনে সম্মত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বরিস জনসন। খবর এএফপি ও রয়টার্সসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, নারীসহ সবার মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো এবং আফগানিস্তানের মাটি সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে না দেওয়া হলেই কেবল তালেবানের সঙ্গে কাজ করবে তারা।
মঙ্গলবার জরুরি বৈঠকের পর ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে জোটের এই অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা বলিনি যে, তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছি। আমাদের অবশ্যই তাদের সঙ্গে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা উচিত, এমনকি নারীদের রক্ষার চেষ্টা করা উচিত। এজন্যই তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করতে হবে।
কাবুল দখলের পর তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান জানিয়েছে, তারা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক চায় এবং ইসলামি আইনের মধ্যে থেকে তারা নারীর অধিকারের প্রতি সম্মান জানাবে। তাদের এই ঘোষণায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা না থাকলেও এবারের সুরটি ২০ বছর আগেকার তাদের শাসনের সময়ের চেয়ে নরম। বোরেল জানান, ইইউর অগ্রাধিকার হচ্ছে কাবুল থেকে ইইউর কর্মী এবং আফগান সহায়তাকারীদের প্রত্যাহার করা।
ইইউর সঙ্গে স্থানীয় যারা কাজ করছিল আত্মীয়-পরিজনসহ তাদের সংখ্যা প্রায় ৪০০। এদের গ্রহণের জন্য কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের এলাকা ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে স্পেন। সেখান থেকে তাদের ইইউর অন্যান্য দেশে পাঠানো হবে বলেও জানান বোরেল।
তিনি জানান, আফগানদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে, এমনকি বাড়ানোও হতে পারে। তবে আফগান সরকারের কাছে তখনই সাহায্য পাঠানো হবে যখন শর্তগুলো পূরণ করা হবে। সম্ভাব্য অভিবাসন বিপর্যয় এবং মানবিক সংকট এড়াতে দ্রুত একটি আলোচনা শুরু করার কথাও বলেন তিনি। বোরেল বলেন, কাবুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা শুরু করতে হবে। তালেবান যুদ্ধে জিতেছে তাই আমাদের আলোচনা করতে হবে।
এদিকে বুধবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তালেবানকে মূল্যায়ন করা হবে তাদের কাজ দেখে, কথায় নয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধ এবং মানবাধিকার বিশেষ করে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের অধিকারের প্রতি তাদের মনোভাব দেখা হবে।
জি-৭ বৈঠকের ঘোষণা বাইডেন-বরিসের : আফগানিস্তান ইস্যুতে ফোনে আলোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সংকট নিরসনে ভার্চুয়ালি জি-৭ বৈঠক আয়োজনের ঘোষণা দেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।
হোয়াইট হাউজের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ইস্যুতে অভিন্ন কৌশল নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে জি-৭ বৈঠক হবে। ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার চলমান প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ-মার্কিন সহযোগিতাকে উভয় নেতা স্বাগত জানান।
ইমরান খানকে জনসন-মার্কেলের ফোন : আফগান ইস্যুতে মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ফোন করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল।
এ সময় সার্বিক নিরাপত্তা ও মানবাধিকারসহ আফগান নাগরিকদের জন্য সব ধরনের অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ইমরান খানের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বরিস জনসন ও জার্মান চ্যান্সেলর।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন