প্রকাশিত : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:৩৩

কাবুলে মার্কিন হামলায় নিহতরা ‘আইএস ছিল না’

অনলাইন ডেস্ক
কাবুলে মার্কিন হামলায় নিহতরা ‘আইএস ছিল না’

আফগানিস্তান ছেড়ে আসার শেষ সময়ে সন্দেহভাজন আইএস সদস্যদের গাড়ি লক্ষ্য করে একটি ড্রোন হামলা চালানোর কথা বলেছিলেন মার্কিন সেনা কর্মকর্তারা। সেই হামলায় প্রাণ হারিয়েছিল সাত শিশুসহ ১০ জন। কিন্তু তাঁদের সেই হামলার লক্ষ্যবস্তু ঠিক ছিল না। নিহতরা কেউ আইএস সদস্য ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ও ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’–এর অনুসন্ধানে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।

তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়ে সেখান থেকে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তালেবানের শাসন থেকে মুক্তি পেতে হাজার হাজার আফগানও ওই সময় দেশত্যাগ করে। বিমানবন্দরে দেশত্যাগী মানুষের ঢলের মধ্যে গত ২৬ আগস্ট বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ১৩ মার্কিন সেনাসহ ১৭০ আফগান নিহত হয়। 

ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) আফগানিস্তান শাখা আইএসকেপি। এরপর আইএসকে লক্ষ্য করে আফগানিস্তানে ড্রোন হামলা চালানোর কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৯ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় কাবুল বিমানবন্দরের পাশে ড্রোন হামলার ঘোষণা দেয় মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সন্দেহভাজন আইএস সদস্যের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে, যিনি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কর্মকর্তারা দাবি করেন, ড্রোন হামলার পর দ্বিতীয় আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সেখানে বিস্ফোরক থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে।

তবে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এর তদন্তে দেখা গেছে, ওই গাড়িতে দ্বিতীয় কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি। ড্রোন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। সেখানে বিস্ফোরকের ধাক্কায় কোনো কিছু ভেঙে পড়ার দৃশ্য নেই। 

‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ওই ঘটনার বিস্তারিত ভিজ্যুয়াল বিশ্লেষণ করেছে। তাতে ড্রোন হামলার ক্ষয়ক্ষতিই উঠে এসেছে। সেখানে কেবল একটি বিস্ফোরণের চিহ্ন রয়েছে।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ ও ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এর তদন্তে ওই গাড়িচালকের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর নাম জেমারি আহমাদি। ৪৩ বছর বয়সী এই ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আফগানিস্তানে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেন। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’কে তাঁর স্বজনেরা বলেছেন, আহমাদি ও তাঁর পরিবারের আরেক সদস্য যিনি মার্কিন সেনাদের কন্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করেছিলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন।

আহমাদির পরিবার ও সহকর্মীদের তথ্য অনুযায়ী, যে সাদা সেডান আহমাদি চালাতেন, সেটি নিউট্রিশন অ্যান্ড এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের। ২৯ আগস্ট তিনি বিভিন্ন স্থানে থেমেছিলেন তাঁর কাজের জন্য। এর মধ্যে ছিল তাঁর বসের ল্যাপটপ নেওয়া ও সহকর্মীদের পৌঁছে দেওয়া। মার্কিন নজরদারির ড্রোন যে ভারী বস্তু তিনজনকে গাড়িতে ভর্তি করতে দেখেছিল, সেগুলো মূলত পানির কনটেইনার ছিল বলে নিউইয়র্ক টাইমস–এর তদন্তে উঠে এসেছে। কাবুলে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর বাড়িতে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় অফিস থেকে পানি নিচ্ছিলেন আহমাদি।

২৯ আগস্ট বিকেলে আহমাদি যখন বিমানবন্দরের কাছে তাঁর বাসায় ফিরছিলেন, তখন মার্কিন ড্রোন থেকে তাঁর গাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। মার্কিন ড্রোন অপারেটর ওই সময় গাড়ির কাছে কেবল একজনকে দেখতে পেয়েছিলেন। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, আহমাদির স্বজনদের দাবি, আহমাদি আঙিনায় পৌঁছালে তাঁর ও ভাইয়ের ছেলেরা বের হয়ে আসে এবং গাড়িতে চড়ে বসে।

কাবুলে গত ২৯ আগস্ট ওই ড্রোন হামলায় যে ১০ জন বেসামরিক আফগান নিহত হয়, তার মধ্যে সাতটি শিশু ছিল। তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে