প্রকাশিত : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:৪৭

তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বাকবিতণ্ডা

অনলাইন ডেস্ক
তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্বে দ্বন্দ্ব, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বাকবিতণ্ডা

আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে তালেবান নেতাদের মধ্যে বড় আকারের বিরোধের খবর বেরিয়েছে। 

সিনিয়র তালেবান নেতাদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মোল্লা আবদুল গনি বারাদার এবং মন্ত্রিসভার এক সদস্যের সঙ্গে এই বিরোধ হয়েছে।

তালেবানের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, সম্প্রতি নতুন সরকার গঠন নিয়ে গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। যার একপক্ষে ছিলেন মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার অপরপক্ষে ছিলেন মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী এক মন্ত্রী। বেশ কিছুদিন ধরে বারাদার জনসম্মুখে আসছিলেন না। এরপর থেকেই মূলত মতবিরোধের বিষয়টি সামনে আসে। যদিও তালেবান দ্বদ্বের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি।

গোষ্ঠীটির একটি সূত্র জানায়, বারাদার এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিল উর-রহমান হাক্কানির মধ্যে সম্প্রতি উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় তাদের সমর্থকরাও তর্কে জড়িয়ে পড়েন।

কাতারে তালেবানের আলোচক দলের এক সদস্য এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি গত সপ্তাহে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দীর্ঘ ২০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে। সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যেই ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান।  দেশটি থেকে বিদেশি সব সেনা প্রত্যাহারের পর নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে গোষ্ঠীটি।

সূত্র জানায়, তর্কের শুরু নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে বারাদারের অসন্তুষ্টি থেকে। তালেবানের বিজয়ের প্রকৃত দাবিদার কে তা নিয়েও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বারাদার মনে করেন, এ বিজয় এসেছে তার মতো কূটনীতিকদের কারণে। কিন্তু হাক্কানি গ্রুপের মতে, যুদ্ধের মাধ্যমেই এসেছে বিজয়।

বারদারই প্রথম তালেবান নেতা যিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে ২০২০ সালে আলাপ করেছেন। এর আগে তিনি তালেবানের পক্ষে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার সংক্রান্ত দোহা চুক্তিতে সই করেন।

অপরদিকে প্রভাবশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক আফগানিস্তানে আফগান বাহিনী এবং তার বিদেশি মিত্রদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। গোষ্ঠীটিকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেয়। এ গোষ্ঠীর নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তালেবানের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ বাকবিতণ্ডার পর কাবুল ছেড়ে কান্দাহারে চলে গেছেন মোল্লা বারাদার।

সোমবার বারাদার একটি অডিও বার্তায় বলেন, আমি একটি সফরে আছি। আমি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সকলে ভালো আছি।

তবে তালেবান বলে আসছে যে, তাদের মধ্যে কোন বিতণ্ডা নেই এবং মোল্লা বারাদার নিরাপদে আছেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কি করছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি দিয়েছে।

একজন মুখপাত্র বলেছেন, তালেবান সুপ্রিম লিডারের সঙ্গে দেখা করতে বারাদার কান্দাহারে গেছেন। আবার পরবর্তীতে বিবিসি পশতুকে বলেছেন যে, তিনি ‘ক্লান্ত এবং বিশ্রামে থাকতে চান’।

অনেক আফগান মনে করেন, তালেবানের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১৫ সালে এই গ্রুপটি স্বীকার করেছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের মৃত্যুর খবর দুই বছর পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিল। সেই সময় দলটি তার নামে অব্যাহতভাবে বিবৃতি প্রচার করে গেছে।

একটি সূত্র জানায়, আশা করা হচ্ছে, মোল্লা বারাদার কাবুলে ফিরে আসবেন এবং এসব বিরোধের বিষয় নাকচ করে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দেবেন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে