মডার্না ভ্যাকসিন ফাইজারের চেয়ে দীর্ঘ সময় সুরক্ষা দেয়
সুইডেনে যখন তৃতীয় বুস্টার ডোজ নিয়ে বিতর্ক চলছে, ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি নতুন গবেষণার ফলাফল এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের চার মাস পর মডার্না ভ্যাকসিন গ্রহণকারী রোগীদের চেয়ে ফাইজার তথা বিওনটেক ভ্যাকসিন গ্রহণকারী রোগীদের কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি কর্তৃক পরিচালিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজার ভ্যাকসিন গ্রহণের চার মাস পর দেহে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব ৯১ শতাংশ থেকে ৭৭ শতাংশে নেমে আসে। মডার্নার প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব এই একই সময়ে হয় ৯৩ থেকে ৯২ শতাংশ। এই ফলাফলগুলো ৩ হাজার ৭০০ জন আমেরিকানের ওপর বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, যারা ২০২১ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গুরুতর কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজির গবেষক ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ ফরশিদ জালালভান্দ বলেন, সিডিসি প্রাপ্ত গবেষণার যে ফলাফল পাওয়া গেছে, তা সুইডেনের কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের দেহে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ সম্পর্কে তেমন কিছু বলে না। মডার্নার ভ্যাকসিনে এমআরএনএ রয়েছে ১০০ মাইক্রোগ্রাম এবং ফাইজার এবং বিওনটেক ভ্যাকসিনে রয়েছে মাত্র ৩০ মাইক্রোগ্রাম, যা দেহে সুরক্ষা দেওয়ার অন্তর্নিহিত একটি কারণ হতে পারে। এছাড়াও ডোজিং প্রয়োগের যে সময়ের ব্যবধান রয়েছে, সে পার্থক্যও একটা বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করেন ফরশিদ জালালভান্দ।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মডার্না ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ চার সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছে এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়েছে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে। পাশাপাশি, সুইডেনে উভয় ভ্যাকসিনের ডোজই দেওয়া হয়েছে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে। দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যত বেশি হবে, সুরক্ষাও তত বেশি হবে। সুইডেনে যারা ফাইজারের টিকা পেয়েছেন, তাঁরা নির্ভয়ে থাকতে পারেন বলে মন্তব্য করেন জালালভান্দ।
যুক্তরাজ্যে ফাইজার এবং মডার্নার দ্বিতীয় টিকা ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে গবেষণায় দেখা যায়, টিকা গ্রহণকারীদের দেহে দীর্ঘ সুরক্ষামূলক প্রভাব গড়ে উঠেছে। কারণ দ্বিতীয় ডোজের পরই মূলত টিকার প্রভাব দেহে নাটকীয়ভাবে উন্নত হয়। কেউ যদি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের জন্য তিন মাস অপেক্ষা করেন, তাহলে অনেকেই এই সময়ের মধ্যে আবারো কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। আবার স্বল্প বিরতিতে দুটি ডোজ দেওয়া হলে দেহে অল্প সময়ের জন্য শক্তিশালী সুরক্ষা পাওয়া যায় বলে জানান ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ জালালভান্দ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন গবেষণা বুস্টার ডোজের ব্যাপারে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অর্থাৎ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য তৃতীয় ডোজের সময় পার্থক্য কি হতে পারে, তা এখনো সঠিকভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না। ফরশিদ জালালভান্দ নৈতিক দিক নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও সুইডেনের স্বাস্থ্যবিষয়ক দৃষ্টিকোণ থেকে বলেন যে, সুইডেনে যাদের প্রথমে টিকা দেওয়া হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব তাদের তৃতীয় ডোজ দেওয়া উচিত।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন