প্রকাশিত : ৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৫:৪১

বৈশ্বিক উষ্ণতায় ১০ বছরে ১৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন

অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক উষ্ণতায় ১০ বছরে ১৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন

বৈশ্বিক উষ্ণতা বদলে দিচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। এই উষ্ণতার প্রভাবে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সমুদ্রের তলদেশের বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। এটি গত ১০ বছরে সমুদ্রের ১৪ শতাংশ প্রবাল প্রাচীরকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার এই নেতিবাচক প্রভাবের চিত্র উঠে এসেছে এক গবেষণায়। খবর আল জাজিরার।

গ্লোবাল কোরাল রিফ মনিটরিং নেটওয়ার্কের তিন শতাধিক বিজ্ঞানী প্রবালের আবাসস্থল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে গবেষণার পর মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে ফলাফল প্রকাশ করেন। তারা জানান, উষ্ণতার প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া, আরব উপদ্বীপ ও অস্ট্রেলিয়া উপকূল এবং প্রশান্ত মহাসাগরের প্রবাল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গবেষণায় ৪০ বছরের তথ্য-উপাত্ত, ৭৩টি দেশ এবং ১২ হাজার অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গবেষণার পর যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, ১১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার (৪,৫১৭ মাইল) প্রবাল প্রাচীর নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এই মহামারির কবলে পড়েছে প্রবাল জগৎ। এভাবে উষ্ণতা বাড়তে থাকলে গভীর সমুদ্রের তাৎপর্যপূর্ণ প্রবাল প্রাচীর আরও ক্ষতির মুখে পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী পল হার্ডিস্টি এক বিবৃতিতে বলেন, পৃথিবীর প্রবাল প্রাচীরের জন্য জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন বড় ধরনের হুমকি।

প্রবাল প্রাচীরগুলো সমুদ্রের তলদেশের মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ জুড়ে রয়েছে, তবে এগুলো সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণী এবং উদ্ভিদের কমপক্ষে এক -চতুর্থাংশের বাসস্থান। নিসর্গের সৌন্দর্যে যেমন ভিন্নমাত্রা যুক্ত করে আণুবীক্ষণিক প্রাণীটি, ঠিক তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা আর সামুদ্রিক প্রাণী বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছের খাদ্য হিসেবেও প্রবাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

গবেষণায় ১০টি প্রবাল প্রাচীর নিঃশেষ হওয়ার পেছনে প্রবাল ব্লিচিং, অতিরিক্ত মাছ শিকার, অনুন্নত উপকূল এবং পানির মান রক্ষায় অবহেলা প্রভৃতিকে কারণ বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে ৯০ শতাংশ তাপ সমুদ্র শোষণ করে নেয় এবং যার প্রভাব পড়ে প্রবাল প্রাচীরের ওপর।

প্রবাল নামক সামুদ্রিক প্রাণীটি সাধারণত সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। গোষ্ঠীর সমস্ত পলিপ জিনগতভাবে অভিন্ন হয়। প্রাণী হলেও জীবনের পূর্ণবয়ষ্ক অবস্থায় সাগরতলে কোনো দৃঢ় তলের ওপর গেড়ে বসে বাকি জীবন পার করে দেয় নিশ্চল হয়ে। প্রতিটি প্রবাল পলিপ যেখানে গেড়ে বসে সেখানে নিজের দেহের চারপাশে ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিঃসরণের মাধ্যমে শক্ত পাথুরে খোলস বা বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে। একটা প্রবাল পলিপের মৃত্যুর পরেও খোলসটি রয়ে যায় এবং তা অস্মীভূত হয়ে যেতে পারে। এরকম অস্মীভূত প্রবালের দেহাবশেষের ওপর নতুন করে আবার প্রবাল বসতে পারে। এভাবে একটা প্রবাল গোষ্ঠী বহু প্রজন্ম ধরে চলার ফলে বড়সড় পাথুরে আকৃতি ধারণ করে। এভাবেই তৈরি হয় বড় প্রবাল দ্বীপ এবং প্রবাল প্রাচীর।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে