প্রকাশিত : ৭ অক্টোবর, ২০২১ ১৬:৫৫

ইন্দোনেশিয়ার হাতির ওপর করোনার থাবা

অনলাইন ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার হাতির ওপর করোনার থাবা

করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না জীবজন্তুও। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের অনেক প্রাণী এখন অস্থি-কঙ্কালসার। বিশেষ করে হাতিগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে শরীরে চামড়া আর হাড় ছাড়া যেন কিছু নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার কারণে পর্যটনখাতে ধস নেমেছে ইন্দোনেশিয়ায়। প্রশ্ন উঠছে, হাতি ঘিরে গড়ে উঠা দেশটির পর্যটন ব্যবস্থা টিকে থাকবে কি না তা নিয়ে।

বালি দ্বীপের একটি হাতি পার্কে ডজনখানেক হাতি খাবারের অভাবে প্রায় মরতে বসেছে। পার্কটির স্টাফদের ছুটি দেওয়া হয়েছে বিনা বেতনে। করোনার কারণে টিকিট বিক্রি কমে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি হুমকির মুখে এই অবুঝ প্রাণীগুলোও।

বালি এলিফ্যান্ট ক্যাম্প (বিইসি) হলো একটি সাফারি পার্ক। এটি ইন্দোনেশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী উবুদ থেকে আধা ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত।

২০০৫ সালে বিইসি দেশটির বন মন্ত্রণালয় পরিচালিত একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেয় এবং পরে ইন্দোনেশিয়ার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কগুলোর বিপন্ন সুমাত্রান হাতির সংরক্ষণের দায়িত্ব নেয়।

২০০৭ সালের বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের একটি গবেষণা বলছে, সুমাত্রান হাতির সংখ্যা ২৪শ ছিল। এখন বন উজাড় ও মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৬৭ শতাংশ সুমাত্রান হাতির বসবাসের জায়গা ধ্বংস হয়েছে। ফলে নানাবিধ কারণে সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০১২ সালে এটি বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় চলে যায়।

বিইসির হাতিগুলো ৩০ বছর আগে সুমাত্রার একটি প্রজননকেন্দ্র থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। জন্তুগুলো সংরক্ষণ ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য কাজে লাগানোর অনুমতিও দেয় দেশটির সরকার। দীর্ঘদিন ধরে মুনাফা অর্জন করে এলেও করোনার কারণে তা ভেস্তে গেছে। বিইসি আধা ঘণ্টার জন্য একটি হাতির ওপর দুজন মানুষ চড়া বাবদ ২৩০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৯ হাজারের বেশি) করে নিতো। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সে আয়। বিইসির অচলাবস্থার কারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হাতি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।

গত ১৫ বছরে তিনটি বাচ্চা হাতির জন্ম থেকে বোঝা যায় যে বিইসি কেবল পশু কল্যাণের প্রয়োজনীয়তাকেই পূরণ করছিল না, কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে কিছু স্বাস্থ্যকর, সুন্দর হাতির ছবিও চোখে পড়ে।

২০ বছর ধরে নেদারল্যান্ডের একজন পশুচিকিৎসক সেখানে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আপনি একটি চর্মসার হাতি কল্পনা করতে পারবেন না যতক্ষণ না আপনি এটিকে নিজ চোখে দেখেন। তারা বড় প্রাণী এবং আপনি তাদের হাড় দেখতে চান না। কিন্তু সেগুলো ছিল শুধু চামড়া ও হাড়।

তবে দেশটির সরকার হাতিগুলোকে বাঁচাতে সব ধরনের সহযোগিতা করছে বলে জানা যায়। কারণ প্রতিমাসে হাতিগুলোর পেছনে খরচ হয় ১৪শ ডলার করে। যা ব্যয় করতে হিমশিম অবস্থা কর্তৃপক্ষের।

সূত্র: আল জাজিরা

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে