প্রকাশিত : ৩ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৩১

জাতীয় চার নেতাকে বাদ রেখে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় চার নেতাকে বাদ রেখে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়

মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে বাদ রেখে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব নয়। এ জন্য নতুন প্রজন্মের সামনে তাদের জীবনী তুলে ধরে প্রকৃত ইতিহাস জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা।

বুধবার (৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও চার নেতার প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ শেষে তারা এই আহ্বান জানান।

শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। এই দুর্যোগময় মুহূর্তে জাতীয় চার নেতা দৃঢ়তার সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় কারাগারে ৩ নভেম্বর নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্বাভাবিকভাবে আমরা চাই এটার বিচার হোক এবং খুনিদের শাস্তি হোক।

সোহেল তাজ বলেন, আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম যেন জানতে পারে কী লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। সোনার বাংলার স্বপ্নের জন্য, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। আমি মনে করি, চার নেতার পরিবারবর্গ মনে করে ওনাদের জীবনী জাতীয়ভাবে মানুষের সামনে, নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা উচিৎ।

তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বই পুস্তকে যদি তাদের জীবনী তুলে ধরতে পারতাম তাহলে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হতো। তাহলে আগামীর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে আমরা নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে পারবো। ৩ নভেম্বর শোকাহত দিনে এটাই আমাদের চাওয়া।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, জেল হত্যাকারীরা প্রায় একই মানুষ। আমি সকল মানুষের, সকল সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে বলতে চাই, বিশ্বের সকল দেশে যেমন একটা বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা থাকে, পাশাপাশি একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়। হত্যাকাণ্ড মানে খালি গুলি করলো চলে গেল, এমনটি নয়। এর পেছনের কারিগর বা কুশিলব যারা তাদেরকে জানার জন্য যেন একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা সুদূর অতীতে না, পাশের দেশের দিকে যদি তাকাই ইন্দিরা গান্ধী মারা যাওয়ার পর সেরকম কমিশন গঠন করা হয়েছে, একইসঙ্গে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। একইভাবে রাজীব গান্ধী হত্যার পরেও তাই করা হয়েছে। ১৯৬৩ সালে কেনেডিকে আমেরিকায় হত্যা করা হয়। সেসময়ও আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কারণ আলাদা কমিশন ছাড়া কারা ঘটনার পেছনে ছিল সেটা জানা সম্ভব নয়।

সিমিন হোসেন রিমি আরও বলেন, আমরা শুধু শোক প্রকাশ করতে চাই না, কাঁদবো আর আসবো আর সেই দিনকে স্মরণ করবো সেটা নয়। আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মনে করি, যে মানুষদের হত্যা করলে দেশের চেহারা বদলে যায়, রাষ্ট্রের চিন্তাধারা বদলে যায়- সে মানুষদের যথাযথ মর্যাদায় সম্মানের সঙ্গে নাগরিকদের জানানো উচিৎ। তাদেরকে আড়ালে রেখে কোনদিনও আমরা সোনার বাংলা গড়তে পারবো না।

সৈয়দ এম মনসুর আলীর পুত্র রেজাউল করিম বলেন, ৩ নভেম্বর জেলখানায় যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল তার ৪০ বছর হয়ে গেলে তদন্ত কমিশনসহ বিভিন্ন দাবি উঠছে। কিন্তু একটা তদন্ত কমিশন সে সময় গঠিত হয়েছিল, সেটার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কেউ জানতে পারেনি এখনো। তৎকালীন অবৈধ প্রেসিডেন্ট মোস্তাকের নির্দেশে জেলখানায় ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড হয়। তৎকালীন জেল কর্তৃপক্ষের কী ভূমিকা ছিল আমরা জানতে চাই। এছাড়া, জাতীয় চার নেতার যে ভূমিকা ইতিহাসে তা যথাযথ মূল্যায়ন করা উচিৎ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে