মানবাধিকার ইস্যুতে কোম্পানির জন্য নতুন নীতিমালা করবে জাপান
![মানবাধিকার ইস্যুতে কোম্পানির জন্য নতুন নীতিমালা করবে জাপান](./assets/news_images/2022/02/15/japan-cover-20220215125534.jpg)
মানবাধিকার ইস্যুতে জাপান সরকার পাবলিক কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন নীতিমালার খসড়া তৈরি করবে। গ্রীষ্মকালের প্রথম দিকেই সেটি করা হবে বলে জানা গেছে। এই নীতিমালা করার কারণ হচ্ছে যাতে কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো চিহিৃত করতে পারে এবং একই সঙ্গে প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে। জাপানের অর্থমন্ত্রী কোইচি হ্যাগিউদা সরকারের নতুন গাইডলাইন শিগগির ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন।
এই নীতিমালা কোম্পানিগুলোকে তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে শিশু শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করার বিষয়গুলো জানতে যখন তখন অঘোষিত পরিদর্শনসহ নানাবিধ কৌশল ও পদ্ধতি তৈরিতে নির্দেশনা দেবে।
নতুন গাইডলাইন তৈরি করে মানবাধিকার বিষয়গুলোর ব্যাপারে জাপান সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো দূরত্ব কমাতে চায়। বিশেষ করে এই দেশগুলো যখন মানবাধিকার বিষয়ে অনেক সতর্ক অবস্থান নেয়। উদাহারণস্বরুপ বলা যেতে পারে, চীনের উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। চীনের বিরুদ্ধে জাতিনিধনের অভিযোগও আনছে তারা।
জাপানি কোম্পানিগুলো এ ক্ষেত্রে তাদের পশ্চিমা সমকক্ষদের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। যদি তারা মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগগুলো মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয় তবে ক্লায়েন্টদের সাপ্লাই চেইন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
কোম্পানিগুলো মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেও রয়েছে। চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম নির্যাতনের অভিযোগ এবং বিশ্বজুড়ে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি চীনের পণ্য সরবরাহকারী কোম্পানির সঙ্গে সুইডিশ অ্যাপারেল মেকার এইচ অ্যান্ড এম দ্রুত ব্যবসা স্থগিত করে সরে দাঁড়িয়েছে। তবে ইউনিক্লো কোম্পানিটির অবস্থান কি সে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ।
অ্যাপল সরবরাহকারীদের জন্য নিজস্ব গাইডলাইন তৈরি করেছে। মার্কিন প্রযুক্তিবিষয়ক এই কোম্পানি মানবাধিকার রক্ষায় সম্মতির জন্য একটি তিন-স্তরের নিরাপত্তা পরিমাপক ঠিক করেছে। নিচের দুই স্তরের সরবরাহকারীরা সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হলে তাদের লেনদেন স্থগিতও হয়ে যেতে পারে।
গত বছর জাপানের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারা পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, জাপানের অর্ধেক পাবলিক ট্রেড কোম্পানি মানবাধিকারের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয় না। তাদের মধ্যে প্রায়, ৩০ শতাংশ বলেছে যে তারা কীভাবে এই ধরনের তদন্ত পরিচালনা করবে তা জানে না। সরকারের লক্ষ্য একটি নীতিমালা প্রদান করে তাদের সেই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা।
আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীরা মানবাধিকারবিষয়ক সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহিৃত না করার কারণে কোম্পানিগুলোকে এড়িয়ে যান। ইউরোপের সরকারগুলো আইনের খসড়া তৈরি করেছে যাতে কোম্পানিগুলোকে মানবাধিকার বিষয়ে কাজ করার জন্য উৎসাহ দেয় এবং যেগুলো না করলে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে৷
২০২০ সালে জাপান সরকার মানবাধিকার ইস্যুতে কোম্পানিগুলোর জন্য অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে কিন্তু সেই ধারাবাহিকতায় কোনো শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আগামীতে গাইডলাইনটিতে একটি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় পরিচালকদের অনুপস্থিতিতে সাপ্লাইয়ারদের সঙ্গে কথা বলা এবং তৃতীয় পক্ষ দ্বারা পরিদর্শন করানোর কাজ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো পূর্বের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে মূলনীতির বিষয়গুলোও গাইডলাইনে থাকবে।
কোম্পানিগুলো তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে কোন জোরপূর্বক শ্রম বা শিশু শ্রম বিদ্যমান নেই তা প্রদর্শনের জন্য তাদের কতটা প্রমাণ দিতে হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যেমন, অটোমেকার, যাদের বহু স্তরের সাপ্লাইয়ার রয়েছে। মিজুহো রিসার্চ অ্যান্ড টেকনোলজিসের একজন নির্বাহী গবেষণা কর্মকর্তা জুনিচি সুগাওয়ারা বলেন, এটি চিহ্নিত করা কঠিন যে, একটি বড় কোম্পানির সব ধরনের সাপ্লাইয়ারের সবকিছু পরিদর্শন করে দেখা। তিনি আরও বলেন, যখন ছোট ও মধ্যম আকারের কোম্পানিগুলোর কথা আসে তখন এটি আরও কঠিন। সেকারণে সরকারের একান্ত সহযোগিতা দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
পশ্চিমা দেশগুলো তাদের মানবাধিকার নীতিমালাগুলো আরও শক্ত করছে। জার্মানি ২০১৬ সালে মানবাধিকার ইস্যুতে একটি গাইডলাইন তৈরি করেছিল এবং কোম্পানিগুলোকে তা অনুশীলন করার অনুরোধ জানায়। কিছু কোম্পানি সেগুলো অনুসরণ করলে গতবছর এ ধরনের একটি আইনও পাস হয়। এই আইন ২০২৩ সাল থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এতে বলা হয়েছে, বড় কোম্পানিগুলোকে সরবরাহকারীদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিদর্শন করতে হবে, ফলাফল প্রকাশ করতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করতে হবে।
মানবাধিকারবিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা নিয়ে জাপানের কোম্পানিগুলোও আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস বিভাগ ইউনিক্লোর পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। একই ধরনের সমস্যার মুখে পড়ে আরও অনেক কোম্পানি। পশ্চিমা দেশগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের লক্ষ্যবস্তু হওয়া এড়াতে গাইডলাইন অনুসরণ করে জাপান সরকার প্রথমে কোম্পানিগুলোকে তৎপর হওয়ার কথা বলবে। যদি তাও যথেষ্ট না হয় তবে সেটি আইনে পরিণত করার কথা বিবেচনা করবে দেশটির সরকার।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন