স্মৃতি হারিয়ে ভারতে রাস্তায় ঘুরছিলেন হাসিনা বানু, ফিরছেন ৭ বছর পর
![স্মৃতি হারিয়ে ভারতে রাস্তায় ঘুরছিলেন হাসিনা বানু, ফিরছেন ৭ বছর পর](./assets/news_images/2022/02/18/woman-20220218123530.jpg)
বছর চারেক আগে মুম্বাইয়ের পানভেল থেকে হাসিনা বানুকে যখন উদ্ধার করে পুলিশ, তিনি নাম-পরিচয় কিছুই বলতে পারছিলেন না। উদ্ভ্রান্তের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিলেন। ওই অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাদের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে মানসিক চিকিৎসা। সুখবর হচ্ছে, ধীরে ধীরে নিজের নাম-পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা সব মনে পড়েছে হাসিনা বানুর। জানিয়েছেন, বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলায়, সংসারে স্বামী-সন্তানও রয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করতে আর তর সইছে না এ নারীর।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রায় ৫০ বছর বয়সী হাসিনা বানু শিগগির খুলনায় ফিরবেন। বাড়িতে স্বামী ও পাঁচ সন্তান তাকে দেখার জন্য উন্মুখ। তাদের সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে এ নারীর।
হাসিনা বানুর স্মৃতি ফেরাতে সহায়তা করেছে সোশ্যাল অ্যান্ড ইভাঞ্জেলিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর লাভ (সিল) নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। এটি মূলত আশ্রয়হীন বা হারিয়ে যাওয়া মানুষদের পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে সহায়তা করে। এতদিন তাদের পানভেলের একটি আশ্রয়কেন্দ্রেই রয়েছেন হাসিনা বানু।
সিলের প্রতিষ্ঠাতা ধর্মযাজক কে এম ফিলিপ বলেন, হাসিনা বানু ২০১৮ সালে বিভ্রান্ত ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত গৃহহীন এক নারী হিসেবে আমাদের কাছে এসেছিলেন। তবে মানসিক চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে তার অতীতের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে পড়তে শুরু করে। যেমন- খুলনা, এর পাশের জেলা বাগেরহাট। তিনি বাহরানি পার্ক এলাকার কথাও উল্লেখ করেছেন। তার তিনটি মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।
এসব কথা মনে পড়ার পর ভারতীয় সমাজকর্মীরা দ্রুত বাংলাদেশ-ভিত্তিক একটি বিচার ও সেবা বিষয়ক সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সংগঠনটির প্রতিনিধি মুক্তা দাশের প্রচেষ্টায় হাসিনা বানুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়।
হাসিনা বানুর এক ছেলে খুলনায় রিকশা চালান। সম্প্রতি তাদের মধ্যে ফোনে কথা হয়েছে। মা এখনো বেঁচে রয়েছেন শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।
ফিলিপ বলেন, হাসিনা বানু কাজের সন্ধানে আরও কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন। সাত বছর আগে তিনি বেঙ্গালুরুতে ওই দলটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন ও মানসিক ভারসাম্য হারান। ওই অবস্থায় ট্রেনে ভ্রমণ করতে করতে একসময় পানভেলে নামেন। সেখানে স্থানীয় পুলিশ তাকে দেখতে পেয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসে।
সিলের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা হাসিনা বানু বলেন, বেঙ্গালুরুতে ট্রেনের ভেতর ঘুমিয়ে পড়লে কেউ আমার সব টাকা ও জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। দলের বাকি সদস্যদের খুঁজে পাচ্ছিলাম না, কোন স্টেশনে পৌঁছালাম তাও জানতাম না। মনে হয়, এমন কিছু খাওয়ানো হয়েছিল, যার কারণে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যাই হোক, এখন আমি বাড়ি গিয়ে স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। সন্তানেরা অবশ্যই অনেক বড় হয়ে গেছে।
এম জৈনাম্মা নামে এক ভারতীয় সমাজকর্মী জানান, কাছে পাসপোর্ট বা অন্য কাগজপত্র না থাকায় হাসিনা বানুকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই ধরা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছে ও কিছু দিন আগে হাসিনা বানুকে দেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন