কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ. কোরিয়ার ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল
![কার্বন নিঃসরণ কমাতে দ. কোরিয়ার ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল](./assets/news_images/2022/03/01/korea-2-20220301131546.jpg)
বরই ফুলের মতো শোভা পাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল। ৯২ হাজার সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলের প্রজেক্ট আশা জাগাচ্ছে কিভাবে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে দেশটির উন্নয়ন প্রকল্পকে ত্বরান্বিত করবে। নবায়নযোগ্য শক্তি এমন শক্তির উৎস যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় ব্যবহার করা যায় এবং এর ফলে শক্তির উৎসটি নিঃশেষ হয়ে যায় না।
ফোটোভোলটাইক সৌর প্যানেল সরাসরি সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে। আর সেটিকেই কাজে লাগানো হয় এই প্রজেক্টে।
নবায়নযোগ্য শক্তিসমূহ পরিবেশ বান্ধব এবং কার্বন নিঃসরণ মুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং একটি টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থায় পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদীরা নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে।
প্রজেক্ট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হানওয়া সলিউশন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, হ্যাপচিওনের দক্ষিণ কাউন্টিতে ১২ মাইল দীর্ঘ জলাধারে ১৭টি দৈত্যাকার জায়ান্ট ফুল ৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম, যা ২০ হাজার বাড়িতে আলো পৌঁছে দেবে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। এটি এমন একটি দেশে যা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে রয়েছে। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পোন্নত অর্থনীতি আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
গ্রিনপিস কোরিয়ার জলবায়ু বিশেষজ্ঞ কিম জিসোক বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রয়োজন এবং ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল এটি সমাধানের একটি অংশ হতে পারে। কারণ এটি নাগরিকদের মতের বিরোধী নয় এবং কোনো ভূমির দরকার হচ্ছে না।
গতবছর নভেম্বরে এই প্রজেক্ট নিয়ে করা একটি অনুষ্ঠানে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন-জে ইন বলেন যে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প ২০৫০ সালের মধ্যে ৯ দশমিক ৪ গিগাওয়াট বা নয়টি পারমাণবিক চুল্লির সমতুল্য বিদ্যুৎ যুক্ত করার সম্ভাবনা আছে। এটি ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন শূন্যতা বা নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল নিয়ে এর আগে কাজ শুরু হয়েছে এশিয়ায়। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল নির্মাণ করে সরবরাহের কাজে লাগিয়েছে। ১ লাখ ২২ হাজার প্যানেলের সমন্বয়ে সিঙ্গাপুরের প্রকল্পটি ৪৫টি ফুটবল মাঠের সমান। এখান থেকে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে, তা দিয়ে দেশটির পাঁচটি পানি শোধনাগার চালানো যাবে। থাইল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম হাইড্রো-ফ্লোটিং সোলার হাইব্রিড সিস্টেম নির্মাণ করেছে গতবছর। ভারত ২০২৩ সালের মধ্যে ওমকারেশ্বর বাঁধের ওপরে ৬০০ মেগাওয়াট প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা করেছে।
সংশ্লিষ্ট গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। যেখানে জমির বিধিবিধান এবং মূল্য নির্ধারণের পাশাপাশি স্থানীয়দের বিরোধিতাসহ নানাবিধ কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। জলাধার মালিকদের জন্য, ভাসমান সৌর প্যানেল দ্বিগুণ আকর্ষণীয় কারণ এটি রাজস্ব প্রবাহ যোগ করে এবং একই সময়ে বাষ্পীভবন হ্রাস করে।
ভাসমান সৌর প্রকল্পগুলো সাধারণত পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সহজে সংযোগ করা যায়, একটি হাইড্রো-ইলেকট্রিক প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যমান সংযোগের মাধ্যমে বা জলাধারটি একটি শহুরে এলাকার কাছাকাছি অবস্থানে থাকে। ফোটোভোলটাইক সৌর প্যানেল গরম আবহাওয়া থেকেও প্যানেলকে রক্ষা করে। যদিও বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য বলছে, ভূমিতে সৌর প্যানেল তৈরির চেয়ে ভাসমান প্যানেল নির্মাণে খরচ ১৮ শতাংশ বেশি।
হ্যাপচিওন দেখায় কিভাবে জলাধারভিত্তিক সিস্টেমগুলো উন্নত দেশগুলোতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণের সবচেয়ে বড় বাধাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে। হ্যাপচিওন বাঁধটি আশির দশকে নির্মাণ করা হয়েছিল চুন -ডু-হওয়ানের সামরিক শাসনের সময়।
এই প্রজেক্টে প্রায় ১৪০০ জন বাসিন্দা সম্মিলিতভাবে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ওয়ান (২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার), বা মোট খরচের প্রায় ৪ শতাংশ বিনিয়োগ করেছেন, ২০ বছরে ১০ শতাংশ বার্ষিক রিটার্ন পাওয়ার আশায়। এই সম্প্রদায়টিই অনুরোধ করেছিল যে সৌর প্যানেলগুলোকে ফুলের আকারে সাজাতে যেনো দৃষ্টিনন্দন হয়।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন