নম্রতার ভাষা শিখছে আমেরিকা
![নম্রতার ভাষা শিখছে আমেরিকা](./assets/news_images/2022/03/20/biden-cover-20220320123028.jpg)
যে দেশটি একটি নয়, দুটি দেশকে আক্রমণ করে এই শতাব্দীর সূচনা করেছিল, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন টানা ২৫দিন ধরে অব্যাহত থাকলেও সেই দেশ এখনো মুখে যুদ্ধে জড়ানোর কথা তুলছে না। বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদনে এমন বিশ্লেষণী তুলে ধরেছেন সাংবাদিক কেটি কে।
ইরাক যুদ্ধের সময় ‘শক অ্যান্ড অ’ অর্থাৎ রক্ত পানি করা হামলার হুমকি, সে অনুযায়ী হামলাকারীই এখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সতর্ক আচরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ আসলে কি বার্তা দেয়? কেনই বা সেটি করছে? যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিকল্প পথই বা কি আছে, এমন প্রশ্ন আন্তর্জাতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।
যুদ্ধ থামাতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র একের পর এক নিষেধাজ্ঞা এনেছে রাশিয়ার ওপর। তাতেও হালে পানি পায়নি। সর্বশেষ নিজ উদ্যোগে শুক্রবার (১৮ মার্চ) চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেই আলোচনার ফলও কতটা কাজে দেবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। উল্টো তাইওয়ান ইস্যুতে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। বলা চলে, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বাইডেনের এ গুরুতর আলোচনাও ভেসতে যাচ্ছে। যদিও বাইডেন বোঝাতে চান যে তার কূটনৈতিক কৌশল আলাদা।
সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় ব্যর্থতার ছাপ রাখার পর আমেরিকা তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দাদের কোনো প্রস্তুতি ছিলনা সেসময়। যেভাবে কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহার হয়েছে তার পেছনে অব্যবস্থাপনা আর অযোগ্যতার প্রমাণ পেয়েছে অনেক মিত্র দেশই। তাদের অভিযোগ ছিল আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কথাই বলেনি। অনেক মিত্র দেশই সেসময় আফগানিস্তানে ন্যাটোর কিছু সদস্য রাখার কথা বলেছিল, কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেনি হোয়াইট হাউজ। ফলে ন্যাটো সদস্যদেরও দ্রুত আফগানিস্তান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
গতবছর সেপ্টেম্বরে ঘটে আরও একটি বড় ঘটনা। হোয়াইট হাউজ হঠাৎ করেই ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নিরাপত্তা জোট করার ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণায় রীতিমত অবাক হয় ফ্রান্স সরকার। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রোর কার্যালয় থেকে বলা হয় ‘অকাস’ নামে এই জোট তৈরির কথা তারা খবরের কাগজে পড়ে জানতে পারে। সবচেয়ে পুরনো বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে আমেরিকার এমন আচরণ ছিল নজিরবিহীন। কিন্তু ততক্ষণে সম্পর্কের অবনতির যা হবার তা হয়েই গেছে।
২০২১ সালে শরৎকালেও ইউরোপীয়রা বাইডেন প্রশাসনের ব্যাপারে হতাশ হয়। তারা ধারণা পোষণ করেন ট্রাম্প বিদায় হওয়ার পর আমেরিকার আচরণে পরিবর্তনের যে আশা তাদের ছিল সে আশায় গুড়ে বালি। ফলে ওয়াশিংটন যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের ঘণ্টাধ্বনি বাজার খবর জানাচ্ছিল, তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে চায়নি ইউরোপীয়রা। যদিও বাইডেন প্রশাসন ইউরোপের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে আসছিল।
২০০২ সালের ইরাক যুদ্ধের পরিস্থিতি, ২০২১ সালে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ইউক্রেন সংকটকে হোয়াইট হাউজ ভিন্নভাবে সামলানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত দখল করেন, সে সময় সেনা পাঠাতে আমেরিকা বিশ্বের কাছ থেকেই প্রায় জোর করে সমর্থন আদায় করেছিল। ১৯৯৯ সালে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন কসোভোতে নৗাটোর বিমান হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
নাইন-ইলেভেনের পর ইরাকে সামরিক অভিযানের জন্য প্রায় জবরদস্তি করে একটি সামরিক কোয়ালিশন তৈরি করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ। ২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফি সরকারকে উৎখাতের অভিযানে যোগ দিয়েছিল আমেরিকাও।
কিন্তু এখন কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমীভোবে দেখা যাচ্ছে আমেরিকাকে। যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আহ্বানে এখনো সাড়া দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অস্ত্র পাঠানো, সাইবার সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সাহায্য করা ছাড়া বাইডেন আর বেশি কিছু করবেন বলে মনে হচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন