পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ৩৩ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন তিনি। তবে নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ নন তার শরিকরা।

আইন-ই-সদরে আয়োজিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজারানি। প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি নতুন মন্ত্রীদের শপথ পাঠ করাতে অপারগতা জানানোর পর অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়। তবে প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতিতে সাদিক সানজারানি নতুন মন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। প্রথম ধাপে ২৬ জন ফেডারেল মন্ত্রী, তিনজন রাজ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তিনজন উপদেষ্টার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) একটি সূত্র সংবাদমাধ্যম ডনকে জানিয়েছে যে, পিএমএল-এন থেকে আসা মন্ত্রিসভার পাঁচ সদস্যের দায়িত্ব বন্টনের বিষয়টি এখনো বিবেচনাধীন। তারা হলেন, খুররাম দস্তগির খান, আব্দুল রহমান কাঞ্জু, রিয়াজ পীরজাদা, সরদার আয়াজ সাদিক এবং মুর্তজা জাভেদ আব্বাসী।

দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিএমএল-এন প্রধান নওয়াজ শরিফ এবং অন্য শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই মন্ত্রিসভা গঠন ও মন্ত্রীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। শাহবাজ শরিফ টুইট করে বলেছেন, তিনি আশা করেন, মন্ত্রী ও পরামর্শদাতারা সমস্যা দূর করতে পারবেন। আর তাদের লক্ষ্য হলো শুধু কাজ করে যাওয়া।

কেউ কেউ মন্ত্রিসভাকে ‘সর্বোত্তম সম্ভাব্য’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন অর্থবিষয়ক পিএইচডি ডিগ্রিধারী রয়েছেন। তারা হলেন ড. মিফতাহ ইসমাইল ও ড. আয়েশা গাউস-পাশা। তবে যেভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন শাহবাজ, তাতে শরিক দলগুলো অসন্তুষ্ট বলে গুঞ্জন উঠছে। বিশেষ করে পিএমএল-এন ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতারা ক্ষুব্ধ।

দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশের জনগণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বুধবার (২০ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে শাহবাজের।

এক টুইট বার্তায় শাহবাজ শরিফ বলেন, ফেডারেল কেবিনেট গঠন করা হয়েছে পিএমএল-এনের শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরিফ ও ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পর। তবে পিএমএল-এন-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচন এবং দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। আরও জানা গেছে, পিএমএল-এনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মরিয়ম নওয়াজ ‘অসন্তুষ্ট’।

সূত্রটি আরও বলেছে যে, নওয়াজ শিবিরের মাত্র একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি হলেন জাভেদ লতিফ, যিনি মঙ্গলবার শপথগ্রহণ করেননি। এছাড়া ইরফান সিদ্দিকি, পারভেজ রশিদ, মুহাম্মদ জুবায়ের, দানিয়াল আজিজ, মুসাদ্দিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো সাইডলাইনে রয়েছে মুসাদ্দিক, মালিক, তালাল চৌধুরী, বিরজিস তাহির, তারিক ফাতেমি এবং জাফরুল্লাহও।

নওয়াজ শরিফের শিবির বলছে, পিএমএল-এনের সিদ্দিকির ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে শিক্ষাখাতে। অথচ তাকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছে রানা তানভিরকে।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি কেবিনেটে এখনও যোগ দেননি। একইভাবে আরেক পিপিপি নেতা, মুস্তাফা নওয়াজ খোখার, যাকে প্রতিমন্ত্রী করার কথা, ফেডারেল মন্ত্রিত্ব না দেওয়া এবং তার চেয়ে জুনিয়র নেতাকে বেছে নেওয়া হয়।

পিপিপির সূত্র বলছে, বিলাওয়াল ভুট্টো মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাজ্য গেছেন। সেখানে তিনি নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করবেন। ওই সূত্রটি আরও জানিয়েছে, বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টি (বিএনপি), বেলুচিস্তান আওয়ামি পার্টি এবং আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টি থেকে কাউকে মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়নি। অথচ পিপিপি তাদের এ নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

মজার বিষয় হলো জেইউএফ-এর প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান তাদের অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করার পরে এনপি এবং স্বাধীন এমএনএ মহসিন দাওয়ার ফেডারেল কেবিনেটে জায়গা পাননি।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজের মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা।

পিটিআই নেতাদের অভিযোগ, শাহবাজ দুর্নীতিবাজদের মন্ত্রী বানিয়েছেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এবং তারা জামিনে আছেন।

সূত্র: ডন

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন