প্রকাশিত : ৬ মে, ২০২২ ১৫:২৫

এক জীবনে দুবার শরণার্থী

অনলাইন ডেস্ক
এক জীবনে দুবার শরণার্থী

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২। মেঘাচ্ছন্ন এক বৃহস্পতিবারে কিয়েভে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদি। সাত বছরের কন্যাকে স্কুলে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত করছিলেন তার স্ত্রী। ঠিক এমন সময় হঠাৎ ইউক্রেনীয় রাজধানীতে রাশিয়ার বোমা হামলা শুরু হয়। একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে তটস্থ হয়ে ওঠেন আবদি, তার স্ত্রী জমজম হুসেইন ও ছোট্ট রুয়েইদা। সংঘর্ষ কী পরিস্থিতিতে রূপ নেবে তা ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তারা।

রাশিয়া পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু করেছে বুঝতে পেরে একসময় পালানোর পরিকল্পনা করেন আবদি। দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নামতে শুরু করেন ১৪ তলা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে।

জার্মানি থেকে টেলিফোনে মোহাম্মদ আবদি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধ হঠাৎ করে আমাদের লক্ষ্য বদলে দেয় এবং আমরা ভাবতে শুরু করি, কীভাবে পালাবো।

বাসা ছেড়ে নিকটবর্তী বাস স্টেশনে যাওয়ার পথে আবদি দেখতে পান, তাদের মতো আরও অনেক মানুষ শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। পুরো রাস্তায় যানজট, গাড়িগুলো অনবরত হর্ন বাজিয়ে চলেছে।

পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতেন আবদি। কিন্তু যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ২০১৫ সালে স্বদেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাকে। অনেক চেষ্টা করে ইথিওপিয়া-রাশিয়া পাড়ি দিয়ে শেষপর্যন্ত ইউক্রেনে পৌঁছে নিজেদের নিরাপদ মনে করেছিলেন তিনি। কিন্তু মাত্র সাত বছরের ব্যবধানে আবারও সেই যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছাড়তে হচ্ছে তাদের।

যে মিনিবাসে করে কিয়েভ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করছিল আবদি পরিবার, সেটির জ্বালানি হঠাৎ ফুরিয়ে যায়। কিন্তু শহরের জ্বালানি স্টেশনগুলোতে ছিল মারাত্মক ভিড় ও উত্তেজনা। সবাই গাড়ির ট্যাংকি ভরে দ্রুত শহর ছাড়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। কয়েক ঘণ্টা পরে অবশেষে আবদিরা জ্বালানি নিতে সক্ষম হন এবং আরও হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অজানা ভবিষ্যতের পথে রওয়ানা দেন।

তার কথায়, পোলিশ সীমান্তে যাওয়ার পথে আমরা সম্ভাব্য রুশ বিমান হামলার ভয়ে ছিলাম। আমি সারাক্ষণ আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভাবছিলাম।

সোমালি এ নাগরিক ভাবতেও পারেননি, ইউরোপের একটি দেশে এসেও যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে তাদের। তাই বারবার সোমালিয়ার সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল তার।

সারাক্ষণ অনিশ্চয়তা আর আতঙ্কের মধ্য দিয়ে তিন দিনের যাত্রা শেষে ইউক্রেন-পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছান আবদিরা। সেখানে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকার বহু শরণার্থীকে দেখতে পান তারা।

মোহাম্মদ আবদি বলেন, প্রথমবার আমার দেশ ছাড়ার কারণ ছিল যুদ্ধ। সেই যুদ্ধই ইউরোপে আমার দ্বিতীয় বাড়ি ধ্বংস করেছে এবং এখন আমি আবার জার্মানিতে আশ্রয় খুঁজছি।

আবদি পরিবারসহ বর্তমানে জার্মান শহর ক্যাসেলের একটি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করছে। তাদের এবারের লক্ষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো। আবদি জানেন, সেটি কঠিন, তবু চেষ্টা তো করতে হবে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনে অন্তত ২ হাজার ৮৯৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৩ হাজার ২৫৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ছেড়ে আশপাশের দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ৫৪ লাখের বেশি মানুষ, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হওয়া লোকের সংখ্যা অন্তত ৭৭ লাখ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে