প্রকাশিত : ৪ আগস্ট, ২০২২ ১০:২৬

ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন, কিয়েভের বাহিনীর ব্যবহার করা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হিমারস ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্যবস্তু নির্দ্দিষ্ট করে দিচ্ছে ওয়াশিংটন। এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন আগামীকাল শুক্রবার তুর্কি নেতা রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সাথে ইউক্রেন সঙ্কট ও শস্য রফতানি করার বিষয়ে করা চুক্তি নিয়েআলোচনার জন্য দেখা করবেন, ক্রেমলিন জানিয়েছে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভাদিম স্কিবিটস্কি মঙ্গলবার ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্রের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, হিমারস রকেট লঞ্চার দিয়ে রাশিয়ার সেনা স্থাপনার ওপর হামলা করতে যুক্তরাষ্ট্র তথ্য ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করছে। তিনি আরো জানান, হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্র স্যাটেলাইটের ছবি ও তাৎক্ষণিক তথ্য দিয়েছে এবং হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের সঙ্গে ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের আলোচনা হয়েছে। ইউক্রেনের উচ্চপদস্থ গোয়েন্দ কর্মকর্তার এমন স্বীকারোক্তির পর রাশিয়া দাবি করল যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হয়েছে। রুশ মুখপাত্র লে. জেনারেল ইগোর কোনাশেনকোভ দাবি করেন, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের বার্তা আটকে দিয়ে এই সংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি মার্কিন কর্মকর্তারা। রাশিয়া আগেও অভিযোগ করেছে, ইউক্রেনে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে ওয়াশিংটন।

রুশ মুখপাত্র কোনাশেনকোভ বলেন, ‘ডনবাস এবং অন্যান্য অঞ্চলের আবাসিক এলাকা এবং বেসামরিক অবকাঠামোগুলোতে কিয়েভের অনুমোদিত সব রকেট হামলার জন্য সরাসরি বাইডেন প্রশাসন দায়ী, এসব হামলা বেসামরিক মানুষের ব্যাপক মৃত্যুর কারণ।’ এ ব্যাপারে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সাক্ষাৎকার দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত, যদিও তারা বার বার বলেছে, তারা শুধুমাত্র অস্ত্র সরবরাহই করছে। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ডনবাস ও অন্যন্য জনবহুল অঞ্চলে কিয়েভ যেসব রকেট হামলা চালিয়েছে, যার কারণে অনেক বেসামরিক লোক মারা গেছেন, তার জন্য বাইডেন প্রশাসন সরাসরি দায়ী।

আগামীকাল বৈঠকে বসছেন পুতিন, এরদোগান : পুতিনের মুখপাত্র, দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার একটি কনফারেন্স কলে সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ার সোচিতে কৃষ্ণ সাগর রিসোর্টে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকটি ‘ইউক্রেনীয় বন্দরগুলি থেকে শস্য রপ্তানি সহজ করার জন্য বৈঠকটি একটি ভাল সুযোগ হবে।’ তিনি বলেন, দুই নেতা ইউক্রেন এবং সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবেন। রাশিয়ার ২৪ ফেব্রুয়ারী আক্রমণের পর থেকে ইউক্রেন থেকে বৈধ শস্য রপ্তানি বহনকারী প্রথম জাহাজটি তুরস্ক এবং জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে সহায়তা করার জন্য সোমবার ওডেসা থেকে যাত্রা শুরু করার পরে আলোচনাটি আসে। ইউক্রেন বলেছে যে তারা সতর্কতার সাথে রপ্তানি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে, ২২ জুলাই চুক্তির অধীনে প্রতিষ্ঠিত নতুন নিরাপদ-উতরণ করিডোরের মাধ্যমে প্রথম দুই সপ্তাহে প্রতিদিন তিনটি করে জাহাজ ছেড়ে যাবে। এটি সফল হলে, রপ্তানি চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রতি মাসে তিন মিলিয়ন টন বাড়তে পারে, ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কুব্রাকভ সোমবার ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেছেন।

কিয়েভের রকেট হামলা নিয়ন্ত্রণ করে ওয়াশিংটন : ভুল লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে রকেট খরচ এড়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভ সরকারের হয়ে হিমারস (হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম) হামলা নিয়ন্ত্রণ করে। জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান কাউন্সিলের সদস্য ভøাদিমির রোগভ গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

‘ভুল লক্ষ্যবস্তু এড়াতে জিপিএস নির্দেশিকা সরাসরি মার্কিন নিয়ন্ত্রণের অধীনে সঞ্চালিত হয় এবং এর কারণ হল অনুপযুক্ত লক্ষ্যবস্তুতে রকেট হামলা এবং পাল্টা আঘাত ঠেকাতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে আমেরিকানরা বিশ্বাস করে না। প্রতিটি রকেটের দাম ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারেরও বেশি। আসলে ইউক্রেনের ভøাদিমির জেলেনস্কির সরকার সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে এর জন্য অর্থ ব্যয় করে,’ জাপোরোজিয়ে কর্মকর্তা জোর দিয়েছিলেন। ভিয়েনায় রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের প্রধান কনস্ট্যান্টিন গাভরিলভ সামরিক নিরাপত্তা এবং অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনায় ২৭ জুলাই বলেছিলেন যে, কিয়েভ সরকার রাশিয়ান ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে আমেরিকান মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম বা ন্যাটোর অন্যান্য দূরপাল্লার বন্দুকের ব্যবহার সুদূরপ্রসারী ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে।

ইউক্রেনে পশ্চিমাদের উস্কানি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু করতে পারে : একজন রাশিয়ান কূটনীতিক জাতিসংঘকে বলেছেন যে, ইউক্রেনের সংঘাতে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে চায় না, তবে সেখানে ন্যাটো দেশগুলির ‘সরাসরি আগ্রাসনের’ প্রতিক্রিয়া হিসাবে মস্কো তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

জাতিসংঘ আয়োজিত একটি পারমাণবিক অপ্রসারণ সম্মেলনে, রাশিয়ার প্রতিনীধি আলেকজান্ডার ট্রোফিমভ বলেছিলেন যে, মস্কো কেবলমাত্র গণবিধ্বংসী অস্ত্র বা একটি প্রচলিত অস্ত্র আক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে যা রাশিয়ান রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপ্রসারণ ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিভাগের একজন সিনিয়র কূটনীতিক ট্রফিমভ, পরমাণু অস্ত্রের অপ্রসারণ সংক্রান্ত চুক্তি পর্যালোচনা করতে জাতিসংঘের সম্মেলনে বলেছেন, ‘এই দুটি অনুমানমূলক পরিস্থিতির কোনোটিই ইউক্রেনের পরিস্থিতির সাথে প্রাসঙ্গিক নয়।’ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি জড়িত থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করার সময় এই মন্তব্য এসেছে।

লভিভে পোল্যান্ড থেকে যাওয়া অস্ত্র চালানে হামলা : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের সেনারা ইউক্রেনের লভিভে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার দাবি, যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেখানে পোল্যান্ড থেকে পাঠানো অস্ত্র মজুদ করে রেখেছিল ইউক্রেন। আর হামলা চালিয়ে মজুদকৃত অস্ত্র ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। লভিভ ইউক্রেনের পূর্ব দিকে অবস্থিত। যুদ্ধের সম্মুখভাগ থেকে যা অনেক দূরে অবস্থিত। রাশিয়া ইউক্রেনের বেশিরভাগ অঞ্চলে হামলা চালালেও লভিভ তাদের হামলার বাইরে রয়েছে। এটি ইউক্রেন-পোল্যান্ডের সীমানার কাছে অবস্থিত। ফলে পশ্চিমারা ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র পাঠায় তার বেশিরভাগই লভিভ হয়ে আসে।

মিয়ানমার গিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গতকাল সকালে মিয়ানমারে পৌঁছেছেন সংঘাত-বিধ্বস্ত দেশটির জান্তা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য। ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের কারণে পশ্চিমের সাথে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় ক্রেমলিন মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকার দিকে ঝুঁকছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘(জান্তার) পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নেতৃত্বের সাথে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’ তিনি যোগ করেছেন যে, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা অন্যান্য বিষয়গুলির সাথে এজেন্ডায় থাকবে। মায়ানমার জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং জুলাই মাসে একটি ‘ব্যক্তিগত’ সফরে মস্কোতে গিয়েছিলেন এবং মস্কোর মহাকাশ ও পারমাণবিক সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। জুলাই মাসে, লাভরভ মিশর, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, উগান্ডা এবং ইথিওপিয়া সফর করেন।

গত বছরের অভ্যুত্থানের পর থেকে রাশিয়া ও তার মিত্র চীনের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জান্তাকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগ রয়েছে। ফেব্রুয়ারী ১, ২০২১-এ অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক দমন অভিযানে ২ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। গত সপ্তাহে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সঙ্কটের বিষয়ে বিরল ঐকমত্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা চার গণতন্ত্র কর্মীকে ফাঁসি কার্যকর করার ঘোষণাকে নিন্দা করা হয়েছিল। বিবৃতিটি রাশিয়া এবং চীনও সমর্থন করেছিল, যারা এর আগে জাতিসংঘে মিয়ানমারকে রক্ষা করেছিল।

সূত্র : দ্য টেলিগ্রাফ, ইরাবতি, তাস, ব্লুমবার্গ, আল-জাজিরা।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে