প্রকাশিত : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:৪৯

সাংবাদিক শিরিনের ‘দুর্ঘটনাবশত’ গুলি লাগে, স্বীকার করছে ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
সাংবাদিক শিরিনের ‘দুর্ঘটনাবশত’ গুলি লাগে, স্বীকার করছে ইসরায়েল

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো স্বীকার করলো যে তাদের একজন সেনা সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে ‘জঙ্গি’ ভেবে গুলি করেন। স্থানীয় সময় সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমনটি জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বন্দুকের গুলিতে ‘দুর্ঘটনাবশত’ আবু আকলেহ শিরিন আঘাত পেয়েছিলেন। কিন্তু সশস্ত্র ফিলিস্তিনি বন্দুকধারী হিসাবে চিহ্নিত সন্দেহভাজনদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল সেদিন।

ইসরায়েলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে গত ১১ মে অভিযান চালায় দেশটির সেনারা। সংবাদ সংগ্রহের জন্য সেখানে ছিলেন ৫১ বছর বয়সী শিরিন আবু আকলেহ। প্রত্যক্ষদর্শী ও তার সহকর্মীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের এক সেনা মাথায় গুলি করলে শিরিন আবু আকলেহ প্রাণ হারান।

সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর এমন স্বীকারোক্তি এলো ইসরায়েলের। আলোচিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের পরিকল্পনা ছিল না ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বলে আগে জানিয়েছল তারা। সেসময় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, সশস্ত্র ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর গুলিতেই প্রাণ হারিয়েছেন শিরিন।

ইসরায়েলের একজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আমাদের উপসংহার হলো যে কোন বন্দুকের গুলিতে তিনি নিহত তা দ্ব্যর্থহীনভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়, তবে একজন আইডিএফ সেনার ‘ভুলবশত’ গুলিতে তিনি আঘাত পেয়েছিলেন। যিনি তাকে একজন সাংবাদিক হিসাবে চিহ্নিত করতে পারেননি।

যদিও আবু আকলেহ ইসরায়েলি সেনা অভিযানের সময় ‘প্রেস’ চিহ্নিত একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট এবং একটি হেলমেট পরিহিত ছিলেন।

সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিক শিরিনের পরিবার অভিযোগ করে যে ইসরায়েল ‘হত্যার দায় নিতে অস্বীকার করছে’। তারা আরও বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাশ। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্তের আহ্বান জানান।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষও উত্তর-পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিবেদককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে। যেখানে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলে যে একজন সেনা এলোপাতাড়ি গুলি করলেও এটি ইচ্ছাকৃত ছিল না।

সোমবার ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন যে, সেনারা গুলি চালাচ্ছিল এবং আবু আকলেহকে তারা ফিলিস্তিনি ‘জঙ্গি’ বলে ‘ভুল’ করেছিল। তিনি আরও দাবি করেন ‘যখন তারা তার দিকে গুলি চালায় তখন তারা জানতো না যে তিনি একজন সাংবাদিক, এটি একটি ভুল ছিল, তারা ভেবেছিল যে তারা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করছেন তিনি। ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে এটি করা হয়নি, এটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

তবে নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনের সমালোচনা করছে। সংস্থাটির মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী শেরিফ মনসুর বলেছেন, অপরাধ স্বীকার করার বিষয়টি অনেক দেরিতে হলো এবং এটি অসম্পূর্ণ। তারা সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকারীর কোন নাম জানায়নি এবং তার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোনো তথ্য দেয়নি যে হত্যাকাণ্ডটি একটি ভুল ছিল।

ইসরায়েলের একটি মানবাধিকার গ্রুপ সেনাবাহিনীর প্রতিবেদনকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ বলে নিন্দা করছে। এই হত্যাকাণ্ডটি ‘কোনো ভুল ছিল না এবং এটি রাজনীতি বলেও দাবি করছে তারা।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত টিম গত জুন মাসে উপসংহারে পৌঁছে যে আবু আকলেহকে যখন গুলি করা হয়েছিল তখন ‘সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের কাছাকাছি কোনো কার্যক্রমের প্রমাণ ছিল না’।

সোমবার সেনাবাহিনীর প্রতিবেদন প্রকাশের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন ‘আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে ইসরায়েলের পর্যালোচনাকে স্বাগত জানাই এবং আবারও এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার গুরুত্বের ওপর জোর দেই। এ ধরনের ঘটনার যাতে ভবিষ্যতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে’।

সাংবাদিক শিরিনের হত্যাকাণ্ড গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এমনকি তার কফিন বহন করা ফিলিস্তিনিদের ওপরেই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববাসী। ইসরায়েলের এমন হিংস্র আচরণের কড়া প্রতিক্রিয়া জানায় বিভিন্ন দেশের প্রধানরা। দ্রুত ঘটনার তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তারা।

১৯৭১ সালে জেরুজালেমে জন্মগ্রহণ করেন এই খ্যাতিমান সাংবাদিক। তিনি ছিলেন একজন খ্রিষ্টান ও মার্কিন নাগরিক। জর্ডানের ইয়ারমুক ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতায় যাওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেন। স্নাতক শেষ করে তিনি ফিলিস্তিনে ফিরে আসেন ও কিছু গণমাধ্যমে কাজ করেন। আল-জাজিরার যাত্রা শুরুর এক বছর পর তিনি এর সঙ্গে যুক্ত হন।

সূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

 

উপরে