প্রকাশিত : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:৪২

ইউক্রেনে পারমাণবিক কেন্দ্রের নিরাপত্তায় জাতিসংঘের আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক
ইউক্রেনে পারমাণবিক কেন্দ্রের নিরাপত্তায় জাতিসংঘের আহ্বান

ইউক্রেনের জাপোরিজঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা। এই আহ্বানকে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। খবর বিবিসির।

জাতিসংঘের পারমাণবিক বিষয়ক সংস্থা সতর্ক করেছে যে, ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্রমাগত গোলাবর্ষণের ফলে বিপুল পরিমাণে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া সেখানে রাশিয়ার সামরিক সরঞ্জামের উপস্থিতি কেন্দ্রটির নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

ইউক্রেন আক্রমণের শুরুতে ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নেয় রাশিয়া এবং এতে বারবার হামলা চালানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ওই পারমাণবিক কেন্দ্রে সফরের পর জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

ওই প্রতিবেদনে একটি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা অঞ্চল তৈরি করার আহ্বান জানানো হয়েছে। তারা বলছে, সেখানে অবিলম্বে গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সামরিক সরঞ্জামের উপস্থিতি সেখানে আমাদের কর্মীদের জন্য একটি চাপ এবং এর ফলে স্পষ্ট যে কেন্দ্রটি রাশিয়ার দখলে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, একটি নিরাপত্তা অঞ্চল তৈরির বিষয়কে তিনি সমর্থন করবেন যদি তার লক্ষ্য হয় ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের’ বেসামরিকীকরণ। ডিনিপার নদীর দক্ষিণ তীরে ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত শহর এবং সামরিক অবস্থানের কাছেই কেন্দ্রটি অবস্থিত।

উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে কেন্দ্রটিকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। মার্চের শুরুতে রুশ বাহিনী সেটি দখল করে নেয়। মঙ্গলবার রাশিয়া কিয়েভের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টায় তিনবার ওই এলাকায় আঘাত হানার অভিযোগ এনেছে।

ইউক্রেন বলছে, আশেপাশের শহরগুলোতে গুলি চালানোর জন্য রুশ বাহিনী ওই কেন্দ্রকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। যদিও রাশিয়া জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা কেন্দ্রটি পাহারা দিচ্ছে।

তবে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা কোনও পক্ষকে দোষারোপ করার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছে।

জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলটি গত সপ্তাহে যখন কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে তখন সেখানে গোলাগুলি অব্যাহত ছিল এবং সেসময় এর প্রধান রাফায়েল গ্রসি পরমাণু বিপর্যয়ের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন।

যদিও দলটির অধিকাংশ সদস্যই দুদিন পর কেন্দ্রটি ছেড়ে চলে গেছেন। তবে দুজন কর্মকর্তা সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাশিয়ার সামরিক নিয়ন্ত্রণে সেখানে কর্মরত ৯শ সাতজন ইউক্রেনীয় কর্মীর জন্য ‘অত্যন্ত চাপের পরিস্থিতির’ কথা তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে যে, সেখানে কর্মীদের কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং পারিবারিক সহায়তা পাওয়ার অধিকার থাকা উচিত।

জাতিসংঘের পারমাণবিক সংস্থা কেন্দ্রটির ক্ষতির বিশদ বিবরণ দিয়েছে এবং বলেছে যে, অব্যাহত গোলাবর্ষণ এখনই একটি পারমাণবিক জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি তৈরি না করলেও এর নিরাপত্তার জন্য স্পষ্ট ঝুঁকি তৈরি করছে। যার ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।

সংস্থাটি বলছে, সামরিক কর্মকাণ্ডের কারণে একটি পারমাণবিক দুর্ঘটনা রোধ করার জন্য একটি ‘অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা’ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন ছিল। আরও ক্ষতি এড়াতে সকল পক্ষকে একটি ‘পারমাণবিক সুরক্ষা অঞ্চল’ স্থাপনে সম্মত হতে হবে।

ওই পারমাণবিক কেন্দ্রের চারপাশে রাশিয়ার সামরিক যানবাহন এবং সরঞ্জাম দেখা গেছে এবং প্ল্যান্টের ছয়টি চুল্লির মধ্যে দুটির টারবাইন হলের ভেতরে বেশ কয়েকটি সামরিক ট্রাক ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়েছে যে, কেন্দ্রে সামরিক সরঞ্জাম এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কাছাকাছি সংঘর্ষ কেন্দ্রটির সুরক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য হুমকি হতে পারে এমন সামরিক সরঞ্জাম অপসারণের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

পর্যবেক্ষক সংস্থাটি বলছে, কেন্দ্রের ‘কুলিং পন্ড’ দেখার জন্য তাদের রুশ সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছিল। সেখানে রাশিয়ার পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের কর্মকর্তাদের উপস্থিতির সমালোচনা করেছে তারা। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এলে বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, পর্যবেক্ষক সংস্থাটির উচিত ছিল দখলকৃত পারমাণবিক কেন্দ্রে গোলাবর্ষণের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করা। নিরাপত্তা পরিষদের এক অধিবেশনে ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন,

আমরা দুঃখিত যে আপনার (রাফায়েল গ্রসি) প্রতিবেদনে গোলাগুলির উৎসের নাম সরাসরি দেওয়া হয়নি। পর্যবেক্ষক দলের প্রধান রাফায়েল গ্রসি এই অধিবেশনে ভিডিও কলে উপস্থিত ছিলেন।

ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ছয়টি চুল্লি রয়েছে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এর শুধু দুটি কাজ করেছে। তবে এখন মাত্র একটি চুল্লি কাজ করছে। ইউক্রেনের গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী চারটি লাইনের মধ্যে তিনটি যুদ্ধের সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থা বলেছে যে, শেষ লাইনটিও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এখন সেখানে বিদ্যুতের উৎস রয়েছে কাছাকাছি থাকা একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেখানে খুব কম পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্রিড থেকে শেষ রিঅ্যাকটরটির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

 দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে