ইউক্রেনে যে ধরনের যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব
![ইউক্রেনে যে ধরনের যুদ্ধাস্ত্র পাঠাচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব](./assets/news_images/2022/09/12/russia-ukraine-1-20220912102906.jpg)
সপ্তম মাসে প্রবেশ করেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। দু’পক্ষই কঠিনভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও যুদ্ধের সার্বিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায়, এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনও থেমে থাকার নয়, তারাও রাশিয়ার দখল করা বেশ কয়েকটি এলাকা ফের নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, সেপ্টেম্বরের শুরুতে পাল্টা আক্রমণের পর রাশিয়ার দখল থেকে ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা মুক্ত করেছে তারা।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের এই গতি সঞ্চার হয়েছে মূলত পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার কারণে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে ৩০টিরও বেশি দেশ। এবার যেনে নেওয়া যাক সেসব অস্ত্র সম্পর্কে।
সামরিক সাহায্য
এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সাহায্য দিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই রয়েছে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড। আর ব্রিটেনের অবস্থান তৃতীয়।
জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি জানায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ৮৭৯ কোটি ডলার, পোল্যান্ড ১৮৩ বিলিয়ন, ব্রিটেন ১৩৬ কোটি, কানাডা ৯৫ কোটি, জার্মানি ৬৭ কোটি, চেক প্রজাতন্ত্র ৩৫ কোটি, ডেনমার্ক ২৭ কোটি, লাটভিয়া ২৫ কোটি, এস্তোনিয়া ২৫ কোটি এবং অস্ট্রেলিয়া ২৪ কোটি ডলার সাহায্য করেছে ইউক্রেনকে।
দীর্ঘ পাল্লার রকেট
যুক্তরাষ্ট্রের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি বলেছেন, কোনো একটি অস্ত্রই জয়ের জন্য একমাত্র সমাধান নয়।
তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বেশ কয়েকটি অস্ত্র রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এরমধ্যে একটি হলো দীর্ঘ পাল্লার রকেট।
ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে অন্তত এক ডজন দীর্ঘ পাল্লার রকেট লঞ্চার পাঠিয়েছে।
এই অস্ত্রটির নাম ‘হাইমার্স রকেট লঞ্চার সিস্টেম’ বা হাই মবিলিটি আর্টিলারি রকেট। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য ১৯৯০-এর দশকে এই সিস্টেমটি তৈরি করা হয়।
হাইমার্স রকেটের পাল্লা বিভিন্ন দূরত্বের। তবে গড় পাল্লা ৫০ মাইল। এর ওজন ১৬ দশমিক ২৫ টন। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৫৩ মাইল। এটি পরিচালনা করতে প্রয়োজন তিনজন।
হাওইটজার্স
জুলাই মাসের শুরুর দিকে ইউক্রেনে শতাধিক এম৭৭৭ হাওইটজার্স লঞ্চার সরবরাহ করেছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র। এর সঙ্গে পাঠিয়েছে তিন লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ। এসবের আকার ১৫৫ মিলিমিটার।
পশ্চিমা দেশগুলোর দেওয়া এম৭৭৭ হাওইটজার লঞ্চারের পাল্লা রাশিয়ার গিয়াসিন-বি হাওইটজার পাল্লার সমান। তবে রুশ কামান ডি-৩০ হাওইটজারের পাল্লার চেয়ে বেশি। এই লঞ্চারের পাল্লা প্রায় ২৫ মাইল।
ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অস্ত্র
কাঁধে বহন করে গোলা ছোঁড়া যায় এমন হালকা ওজনের ট্যাঙ্কবিধ্বংসী অন্তত পাঁচ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনকে। এর পাল্লা ২০-৮০০ মিটার। এর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি সহজে বহনযোগ্য।
রাজধানী কিয়েভ অভিমুখে রুশ সৈন্যদের অগ্রাভিযান থামিয়ে দিতে এই এন-ল অস্ত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।
ট্যাঙ্ক
ইউক্রেনকে ২৩০টি ট্যাঙ্ক সরবরাহ করেছে পোল্যান্ড এবং চেক প্রজাতন্ত্র। এর নাম টি-৭২ ট্যাঙ্ক। ওজন ৪৬ টন। গতি ঘণ্টায় ৩৭ মাইল। এটি আড়াই মাইল দূরের টার্গেটে হামলা করতে সক্ষম। এই ট্যাঙ্ক পরিচালনা করতে প্রয়োজন তিনজন।
ড্রোন
ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রচুর ড্রোন ব্যবহার হয়েছে। এসব ড্রোন মূলত নজরদারি পাশাপাশি শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে আক্রমণের জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের কাছে বায়রাক্টার টিবি২ নামের একটি ড্রোন বিক্রি করেছে তুরস্ক। এই ড্রোনটি অস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে বায়রাক্টার টিবি২ ড্রোন অত্যন্ত কার্যকরী একটি অস্ত্র।
বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা
ইউক্রেন দাবি করছে যে, রুশ যুদ্ধবিমানের হাত থেকে তারা নিজেদের আকাশসীমা রক্ষায় সফল হয়েছে। তবে ইউক্রেন আরও উন্নত মানের বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অত্যাধুনিক এরকম একটি বিমান প্রতিরোধী ব্যবস্থা পাঠিয়েছে যার নাম ‘নাসামস’। এটি ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের একটি সিস্টেম।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন