প্রকাশিত : ৪ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৬:২৬

১২ মাস আগে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ছিলাম, স্মৃতিকাতর ইলন মাস্ক

অনলাইন ডেস্ক
১২ মাস আগে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ছিলাম, স্মৃতিকাতর ইলন মাস্ক

প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমের নজরে ২০২১ সালের বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব বা ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হয়েছিলেন টেসলা সিইও ইলন মাস্ক। কিন্তু সেই পরিমাণ প্রভাব কিংবা অর্থবিত্ত কোনোটাই এখন নেই বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর। ২০২২ সালে রীতিমতো ঝড় গেছে তার ওপর দিয়ে। ফলে এক বছর আগের সুসময়ের কথা মনে করে বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন ৫১ বছর বয়সী এ ধনকুবের।

১৯২৭ সাল থেকে প্রতি বছর সমাজে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বস্তু বা উদ্যোগকে বর্ষসেরা ঘোষণা করে আসছে টাইম। এই প্রভাব ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় ধরনেরই হতে পারে। টাইমের নজরে ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ হচ্ছেন এমন কেউ, যে সংবাদ বা মানবজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেন, তা সে ভালো বা খারাপ যেটাই হোক না কেন।

বুধবার (৪ জানুয়ারি) ছোট্ট এক টুইটে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ১২ মাস আগে আমিই ছিলাম বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব।


টেসলার পাশাপাশি ইলন মাস্ক স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী। ব্রেইন-চিপ স্টার্টআপ নিউরালিংক এবং অবকাঠামো নির্মাতা বোরিং কোম্পানির নেতৃত্বও তার হাতে।

করোনাকালীন ২০২১ সাল অনেকের জন্য খারাপ গেলেও আশাতীত ভালো গেছে মাস্কের জন্য। ওই বছর তার কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে দামী ইলেক্ট্রিক গাড়িনির্মাতা হয়ে ওঠে। একই বছর মাস্কের রকেট কোম্পানি পুরোটাই বেসরকারি ক্রু নিয়ে মহাকাশ ঘুরে আসে।

একই বছর টেসলার বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের বেশি বেড়ে ফোর্ড মোটর ও জেনারেল মোটরসের সম্মিলিত মূল্যকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

কোম্পানির পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পদও ফুলেফেঁপে উঠেছিল মাস্কের। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যক্তিগত সম্পদের মাইলফলক স্পর্শ করেন টেসলা সিইও। জেফ বেজোসের পর বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এই মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন তিনি।

এসব কারণে টাইম ম্যাগাজিনের এডিটর-ইন-চিফ এডওয়ার্ড ফেলসেনথাল জানিয়েছিলেন, একটি অস্তিত্ব সংকটের সমাধান, টেক টাইটানদের যুগের সম্ভাবনা ও সংকটগুলোকে চিত্রায়িত করা, সমাজের সবচেয়ে সাহসী পরিবর্তন পরিচালনার জন্য টাইমের নজরে ২০২১ সালের সেরা ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক।

কিন্তু এরপর থেকেই যেন দুঃসময় শুরু হয় এ ব্যবসায়ীর। বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এরই মধ্যে ২০ হাজার কোটি ডলার সম্পদ হারানোর রেকর্ড গড়েছেন এ ধনকুবের। সেটিও মাত্র ২৩ মাসের ব্যবধানে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে টেসলার শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের কারণে এর মালিক ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদেও ধস নেমেছে। নিজের সেরা সময়ে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর মাস্কের সম্পদ ছিল ৩৪ হাজার কোটি ডলার। কিন্তু সেটি কমতে কমতে এখন মাত্র ১৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফলে শীর্ষ ধনীর আসনও হারাতে হয়েছে টেসলা সিইও’কে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে টেসলার আধিপত্যও মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে দুটি মডেলের গাড়িতে মার্কিন গ্রাহকদের জন্য সাড়ে সাত হাজার ডলার ডিসকাউন্ট অফার করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা খুবই বিরল ঘটনা। সাংহাইয়ের কারখানায় তারা উৎপাদন কমিয়েছে বলেও জানা গেছে।

তাছাড়া, টেসলা চাপে থাকার মুহূর্তে টুইটার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ইলন মাস্ক। গত অক্টোবরে ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টটি কিনে নেওয়ার পর থেকে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

এ অবস্থায় টেসলার শেয়ারের পতন এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে, ২০২২ সালে ৬৫ শতাংশ দর হারিয়েছে সেটি। আর মাস্ক টুইটারের দাম পরিশোধ করতে এ বছর টেসলা থেকে এত বেশি শেয়ার বিক্রি করেছেন যে, প্রতিষ্ঠানটি আর আর তার সম্পদের সবচেয়ে বড় উৎস নয়। স্পেসএক্সেও মাস্কের অংশীদারত্ব নেমে এসেছে ৪২ দশমিক ২ শতাংশে।

সবশেষ গত ৩ জানুয়ারি অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন প্রচারের দায়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় ২২ লাখ ডলার জরিমানার মুখে পড়েছে টেসলা। দেশটির ফেয়ার ট্রেড কমিশন জানিয়েছে, টেসলা তার বৈদ্যুতিক গাড়ির ড্রাইভিং পরিসীমা এবং চার্জ করার গতি, সেই সঙ্গে জ্বালানি সাশ্রয়ের আনুমানিক খরচের ভুয়া তথ্য এবং অতিরঞ্জিত করে প্রচার করেছে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে