প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৬:০১

অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আবারও বিশ্বভারতীর চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে আবারও বিশ্বভারতীর চিঠি

পশ্চিমবঙ্গে বোলপুরের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না অমর্ত্য সেনের। বেআইনিভাবে ১৩ শতক জমি দখলে রেখেছেন অমর্ত্য সেন, এমন অভিযোগে সেই জমি ফেরত চেয়ে মঙ্গলবার অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে চিঠি দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আবারও শুক্রবার জমি ফেরত চেয়ে দেওয়া হলো চিঠি।

চিঠিতে অমর্ত্য সেন অতিরিক্ত জমি দখল করে রয়েছেন অভিযোগ তুলে তার নিজস্ব জমি কতটা এবং কি পরিমাণ দখল করে রেখেছেন, তা উল্লেখ করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। অবিলম্বে জমি ফেরত চেয়ে, দাবি জানানো হয় ওই চিঠিতে।

এছাড়া চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, অবৈধভাবে দখল করে রাখা জমি পুনরুদ্ধারে দেশের নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে।

জমি নিয়ে বিতর্কের জেরে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন,‘আমাদের অভিযোগ শুধু এই যে দলিলে অমর্ত্য সেনকে ১ দশমিক ২৫ একর জমি দেওয়ার কথা লেখা আছে। কিন্তু উনি ১ দশমিক ৩৮ একর নথিভুক্ত করেছেন। ১৩ শতক জমি বেশি ভোগ করছেন অমর্ত্য সেন।

উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বলেন, ‘অমর্ত্য সেন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ, নমস্য ব্যক্তি হলেও, আমি বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষা করা আমার কর্তব্য।’

উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেন, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কারের দলিল অনুযায়ী শিরোপা তিনি পাননি। যে পাঁচটি বিষয়ে নোবেল দেওয়া হয় তার মধ্যে অর্থনীতি নেই। অর্থনীতির এ পুরস্কার সুইডিস ব্যাংকের টাকায় এবং নোবেল স্মৃতিতে দেওয়া। যদি ওই পুরস্কার নোবেল কমিটি ঘোষণা করে এবং তা দেওয়া হয় অন্যান্য বিষয়ের পুরস্কারের সঙ্গে।

এ প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আদালতে যাওয়ার কোনো রকম লোভ আমার নেই। তবে আমার উকিলের চিঠি একবার গেছে। আবারও একবার নিশ্চয়ই যাবে। আমি আদালতে যাচ্ছি না, সেটা ভয়ে যাচ্ছি না, এটা যদি উপাচার্য মনে করে থাকেন, তাহলে তার চিন্তাশক্তি নিয়ে আমাদের ভাবার কারণ আছে।’

উপাচার্য যদি মাথা খাটিয়ে নতুন তথ্য বার করে থাকেন তাহলে সেটি কোথা থেকে এলো তার জবাব তাকেই দিতে হবে। ‘আমিও তো বলতে পারি উপাচার্যের বাড়িতে গিয়ে, এটা উপাচার্যের বাড়ি নয়, এখানে আমার ছোট মামা থাকতেন।’

অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি এ বিষয়ে এক গাল হেসে তিনি বলেন, আমার কিছু বলার নেই। উনি যত ইচ্ছা দাবি করে যেতে পারেন।’

যদিও ওই বিতর্ক নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে সরগরম হয়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির সংসদ সদস্য ও সর্বভারতীয় সহসভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি, এটা এখন লোক বলছে। আমি দিলীপ ঘোষ অনেক আগেই এ কথা বলেছিলাম। অর্থনীতিতে নোবেল বলে কিছু হয় না।’

পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম বলেন, ‘আচার্যের উচিত এই মুহূর্তে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে তার পথ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যে আমি কিছু বলবো না উনি যা খুশি তাই বলতে পারে।’

বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য, অভিনেত্রী শতাব্দি রায় জানান, ‘অমর্ত্য সেন সমস্ত বাঙালি জাতির গর্ব। তিনি জমি দখল করে আছেন, উপাচার্য কি প্রমাণ করতে পেরেছেন! অমর্ত্য সেন নোবেল পান নিয়ে এ বিষয়ে হাসি ছাড়া আর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।’

জমি দখলের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এমনকি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে ‘মাটি চোর’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন। যার তীব্র প্রতিবাদে জানায় অমর্ত্য সেনের ভক্ত-অনুরাগীরা।

এদিকে, বিশ্বভারতীর শিক্ষার মান নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন অমর্ত্য সেন। পাশাপাশি সামান্য কারণে শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের আচরণের সমালোচনাও করেন তিনি।

জমি দখল নিয়ে বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের অভিযোগকে কল্পনাপ্রসূত বলে অভিহিত করেন অমর্ত্য সেন। তিনি এর আগে জানান, তার বাবা ওই জমি কিনে নিয়েছেন। সেই জমি নিয়ে কেন ৫০ বছর পর হঠাৎ বিতর্কের সৃষ্টি হলো, সেটা তার বোধগম্য হচ্ছে না।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন                 

উপরে