ইউরোপে আশ্রয় আবেদনে বাংলাদেশিদের নতুন রেকর্ড
গত বছর ইউরোপীয় দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ১০ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী। এই সংখ্যা ২০১৬ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। আশ্রয় আবেদনে নতুন রেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশিরাও। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আশ্রয় আবেদন সংক্রান্ত সংস্থা ইইউএএ এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে।
নিজ দেশে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা বা রাজনৈতিক কারণে কেউ নির্যাতনের শিকার হলে বা কারও প্রাণহানির শঙ্কা থাকলে তিনি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ইউরোপীয় দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারেন।
জানা গেছে, ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্লাস (ইইউর ২৭ সদস্য দেশ, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড) দেশগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া ৯ লাখ ৬৬ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। এই সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর বাইরে প্রায় ৪০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক সাময়িক সুরক্ষার আওতায় গত বছর ইউরোপে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন। ইইউএএ জানিয়েছে, ইউক্রেনীয়দের সাময়িক সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে গিয়ে গোটা আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার ওপরই বড় ধরনের চাপ পড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নতুন আগতদের জায়গা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কোন দেশ থেকে কত
অনিয়মিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে প্রবেশের পর অভিবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশে আশ্রয়ের আবেদন জানাতে পারেন। প্রথমবার আবেদন প্রত্যাখ্যান হলে তা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা যায়।
২০২২ সালে ইউরোপে প্রথমবার আশ্রয় আবেদন করেছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ। পুনর্বিবেচনার আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার।
আবেদনকারীদের মধ্যে প্রায় ৪৩ হাজার জন ছিলেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক, যা ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ।
২০২১ সালের মতো গত বছরও আশ্রয়প্রার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিলেন সিরীয় (১ লাখ ৩২ হাজার) এবং আফগান (১ লাখ ২৯ হাজার) নাগরিক। ২০১৬ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যক আবেদন করেছেন দেশ দুটির নাগরিকরা।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন তুরস্কের নাগরিকরা। গত বছর দেশটির প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে লাতিন আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকরা। দেশ দুটির আশ্রয় আবেদনকারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫১ হাজার ও ৪৩ হাজার।
বাংলাদেশিদের রেকর্ড
২০২১ সালে ইইউ প্লাস দেশগুলোতে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি। গত বছর সেই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অনিয়মিত উপায়ে যাওয়া ৩৩ হাজার ৭২৯ জন বাংলাদেশি ইউরোপে আশ্রয় চেয়েছেন। সর্বোচ্চ আবেদনকারীর দিক থেকে বাংলাদেশিদের অবস্থান সপ্তম। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
ইইউএএ’র তথ্যমতে, তুর্কি, ভেনেজুয়েলান, কলম্বিয়ান, বাংলাদেশি ও জর্জিয়ানদের আশ্রয়ে আবেদনের সংখ্যা ২০০৮ সাল পরবর্তী সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে গতি
অনেক সময় আবেদনের পর সিদ্ধান্ত পেতে শরণার্থী, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। তবে গত বছর ৬ লাখ ৩২ হাজার আবেদনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এর মধ্যে ৩ লাখ ৭৯ হাজার বা প্রায় অর্ধেক আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, ১ লাখ ৪৭ হাজার জন শরণার্থী হিসেবে এবং ১ লাখ ৬ হাজার আবেদনকারী সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা সহায়ক সুরক্ষার আওতায় ইউরোপে বসবাসের অনুমতি পেয়েছেন।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস, ডয়েচে ভেলে
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন