প্রকাশিত : ৩ মার্চ, ২০২৩ ১৬:২৪

ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন আদানি

অনলাইন ডেস্ক
ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন আদানি

টানা কয়েক সপ্তাহের ধ্বংসযজ্ঞের পর একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি। বিতর্কের মুখে মাত্র এক মাসে ১৩ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ হারানোর পর ফের বাড়তে শুরু করেছে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দর। পাচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগও।

শুক্রবার (৩ মার্চ) বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপে ১৮৭ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জিকিউজি পার্টনারস। সংস্থাটি আদানি গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কিনেছে বলে জানানো হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এই প্রথম বড় কোনো বিনিয়োগপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলো আদানি গ্রুপ।

রয়টার্সের খবর অনুসারে, আদানি গ্রুপের মূল কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার কিনেছে জিকিউজি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এছাড়া ৬৪ কোটি ডলারে আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেডের ৪ দশমিক ১ শতাংশ শেয়ার, ২৩ কোটি ডলারে আদানি ট্রান্সমিশন লিমিটেডের ২ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার এবং ৩৪ কোটি ডলারে আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেডের ৩ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছে মার্কিন সংস্থাটি।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিনিয়োগের খবর ছড়ানোর পরপরই শুক্রবার আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া আদানি পোর্টসের শেয়ারের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ এবং আদানি গ্রিন এনার্জি ও আদানি ট্রান্সমিশনের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় পাঁচ শতাংশ।

তবে আদানি গ্রুপে বিনিয়োগের ঘোষণার পর জিকিউজি’র সিডনিভিত্তিক শেয়ারের দর কমে গেছে প্রায় তিন শতাংশ।

আদানি গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জুগেসিন্দর সিং বলেছেন, এটি (জিকিউজির বিনিয়োগ) আদানি গ্রুপের অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও প্রবৃদ্ধির প্রতি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের অবিরত আস্থার প্রতীক। তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবকাঠামো, টেকসই জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং শক্তি রূপান্তর পোর্টফোলিওতে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে জিকিউজির ভূমিকার প্রশংসা করি।

জিকিউজির ভারতীয় বংশোদ্ভূত চেয়ারম্যান ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রাজীব জৈন বলেছেন, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, এ প্রজন্মের সেরা উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন হলেন গৌতম আদানি।

এর আগে খবর ছড়িয়েছিল, একটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল থেকে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে আদানি এন্টারপ্রাইজেস। তবে এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।

গত মাসে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে গৌতম আদানির বিরুদ্ধে ‘করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজি’র অভিযোগ তোলে হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তাদের দাবি, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো কয়েক দশক ধরে শেয়ারবাজারে ধোঁকাবাজি এবং হিসাবপত্র জালিয়াতি করে আসছে।

হিনডেনবার্গ আরও দাবি করেছে, আদানির কোম্পানিগুলোর কাঁধে বিশাল ঋণ রয়েছে, যা পুরো গ্রুপটির অর্থনৈতিক ভিত্তিকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

গত ২৪ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সাতটি কোম্পানি প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলারের বাজারমূল্য হারিয়েছে। ধস নেমেছে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদেও। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে তিনি ছিলেন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষধনী। কিন্তু সম্পত্তি কমতে কমতে ধনীদের তালিকায় তিনি এখন ৩০তম। মাত্র এক মাসে আট হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ হারিয়েছেন ৬০ বছর বয়সী এ ব্যবসায়ী।

তবে হিনডেনবার্গের তোলা সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে আদানি গ্রুপ। তাদের দাবি, আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা ভারতের পরিকল্পিত আক্রমণের অংশ।

গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি স্বাধীন প্যানেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে