মোদীর স্বপ্নে মড়ক, একে একে মারা গেলো সাতটি চিতা
গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিজের জন্মদিনে ধুমধাম করে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা আটটি চিতা ভারতের কুনো জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করেছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় সাত দশক পরে দেশটির মাটিতে চিতার পুনঃআবির্ভাব ঘটাতে নেওয়া উচ্চাভিলাষী এক প্রকল্পের আওতায় এরপর আনা হয় আরও ১২টি চিতা। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ যেন মড়ক দেখা দিয়েছে নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা চিতাগুলোর মধ্যে। গত চার মাসে একে একে সাতটি চিতা মারা গেছে ভারতে। এতে হুমকিতে পড়েছে ভারত সরকারের চিতা পুনঃআবির্ভাব প্রকল্পের সফলতা।
বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) কুনো জাতীয় উদ্যানে (কেএনপি) তেজস নামে একটি পুরুষ চিতার মৃত্যু হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল চিতাটি। এ নিয়ে সেখানে গত মার্চের পর থেকে মোট সাতটি চিতার মৃত্যু হলো। এর মধ্যে নামিবিয়া থেকে আনা জোয়ালা নামে একটি চিতার বাচ্চাই ছিল তিনটি।
প্রিন্সিপাল চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট (পিসিসিএফ) ওয়াইল্ডলাইফ জে এস চৌহান জানিয়েছেন, প্রায় চার বছর বয়সী চিতা তেজস অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে মারা গেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
ঘটনার সময় চিতাটি একটি অবরুদ্ধ জায়গায় ছিল। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে পর্যবেক্ষণকারী দলের সদস্যরা তেজসের ঘাড়ের কাছে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে চিকিৎসকদের ডাকা হয়। তবে ট্রাংকুলাইজার ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে তারা পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর ২টা বেজে গিয়েছিল। ততক্ষণে চিতাটি মারা যায়। ময়নাতদন্তের পর তেজসের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, গত মার্চ মাসে চারটি বাচ্চার জন্ম দেয় চিতা জোয়ালা। কিন্তু পানিশূন্যতা ও দুর্বলতায় গত মে মাসে তিনটি বাচ্চা মারা যায়।
তার আগে গত ২৭ মার্চ কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যায় নামিবিয়া থেকে আনা চিতা সাশা। গত ১৩ এপ্রিল মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা চিতা উদয়। গত ৯ মে একটি পুরুষ চিতার সঙ্গে সঙ্গমচেষ্টার সময় সহিংস সংঘাতে মারা যায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা আরেকটি চিতা দাকশা।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্র মোদীর জন্মদিনে কুনো জাতীয় উদ্যানে ছাড়া হয়েছিল আটটি নামিবিয়ান চিতা। এর মধ্যে পাঁচটি ছিল নারী ও তিনটি পুরুষ। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় আরও ১২টি চিতা। মার্চ মাসে একটি নামিবিয়ান চিতা চারটি বাচ্চার জন্ম দিলে কেএনপিতে মোট চিতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২৪টিতে। কিন্তু মারা যেতে যেতে এখন সেই সংখ্যা ১৭টিতে নেমে এসেছে।
একসময় ভারত থেকে আরব উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এশিয়াটিক চিতার আবাসভূমি ছিল। কিন্তু ভারতে ১৯৫২ সালে চিতাকে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭ সালেই এ অঞ্চলের সবশেষ চিতাটির মৃত্যু হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এরপর থেকে ভারতে চিতার পুনঃআবির্ভাবের জন্য বহুবার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। তবে সেগুলো সফল হয়নি। সবশেষ নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে সাত দশক পর দেশটির জঙ্গলে আবারও চিতার বিচরণ শুরু হয়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস