প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০২৩ ১৪:৪৫

হোস্টেলের ওপর থেকে ফেলে ছেলেকে হত্যার অভিযোগ বাবার

অনলাইন ডেস্ক
হোস্টেলের ওপর থেকে ফেলে ছেলেকে হত্যার অভিযোগ বাবার

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় সৌরভ চৌধুরী নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু।

সেই অভিযোগপত্রে তিনি খুনের অভিযোগ করেছিলেন। সঙ্গে লিখেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সৌরভ চৌধুরী সম্পর্কে কিছু কথা। পুলিশের কাছে জমা দেওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই যাদবপুরের সাবেক শিক্ষার্থী ও হস্টেলের আবাসিক সৌরভকে গ্রেফতার করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে রামপ্রসাদ জানিয়েছেন, তার দুই পুত্র। স্বপ্নদীপ ও রত্নদীপ কুণ্ডু। বড় ছেলে উচ্চমাধ্যমিকের পর গত ৩ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়। প্রথমে স্বপ্নদীপ বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থাকার সুযোগ পায়নি বলেও অভিযোগপত্রে জানান রামপ্রসাদ।

পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ৩ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে একটি চায়ের দোকানে তার সঙ্গে সৌরভের পরিচয়। আবাসিক না হয়েও ‘গেস্ট’ হিসেবে হোস্টেলে যে থাকা যায়, সে কথা তিনি সৌরভের মাধ্যমে জানতে পারেন বলে দাবি করেছেন রামপ্রসাদ। তার দাবি, সৌরভই মনোতোষ নামে আরও এক ছাত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন স্বপ্নদীপের। মনোতোষ থাকেন ১০৪ নম্বর রুমে। স্বপ্নদীপের থাকার ব্যবস্থা হয় ৬৮ নম্বর রুমে।

রামপ্রসাদ অভিযোগপত্রে লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়েরই দুই ছাত্র সৌরভ চৌধুরী (সাবেক ও মনোতোষ মণ্ডল (সোশিওলজি, দ্বিতীয় বর্ষ)-এর মাধ্যমে আমার ছেলে হোস্টেলের ৬৮ নম্বর ঘরে থাকার সুযোগ পায়। ঘরটি এ-২ ব্লকের তিন তলায়। ৬ অগস্ট থেকে ছেলে হোস্টেলে থাকা শুরু করে।

মৃত ছাত্রের বাবা অভিযোগ করেছেন, শেষ বার স্বপ্নদীপ মাকে ফোন করে কেঁদে ফেলেছিলেন। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ।

স্বপ্নদীপের বাবা অভিযোগপত্রে লিখেছেন, আমার ছেলে গত রোববার (৪ অগস্ট) থেকে হোস্টেলে থাকা শুরু করে। এরপর আমার সঙ্গে ওর ফোনে কথা হয়। ও খুব চাপে আছে। এখন বলতে পারবে না। বাড়ি গিয়ে বলবে। এরপর বুধবার (৭ অগস্ট) রাত সাড়ে ৮টা-৯টা নাগাদ স্বপ্নদীপ আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমার খুব ভয় করছে। আমাকে হোস্টেল থেকে এখনই নিয়ে যাও। এরপর ওর সঙ্গে ফোনে কথা হয়নি।

অভিযোগপত্রে স্বপ্নদীপের বাবা উল্লেখ করেছেন, অন্যদের ফোন থেকে ফোন করে আমাদের সঙ্গে কথা বলে। ও খুব অস্থির ছিল। আমার স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের কথা হয়। ছেলে মাকে বলে যে, তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে। তখন ছেলে খুবই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় ছিল ও ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। তারপর রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আমার স্ত্রীকে ওখান থেকে একজন ফোন করে জানায় যে, আমার ছেলে ওপর থেকে পড়ে গিয়েছে। তারপর আমার ছেলে মারা যায়।

অভিযোগপত্রের শেষে যাদবপুরের সৌরভের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্বপ্নদীপের বাবা। লিখেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সৌরভের নেতৃত্বে হোস্টেলের অন্য ছেলেরা আমার বড় ছেলেকে অত্যাচার করে ওপর থেকে নিচে ফেলে হত্যা করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনত কঠোর ব্যবস্থা চাই।

এরই মধ্যে এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। সম্মিলিত অপরাধের ধারাতেও মামলা হয়েছে। সৌরভকে শনিবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলের এ-২ ব্লকে থাকা বেশ কয়েক জন আবাসিককে জিজ্ঞাসাবাদও করছে পুলিশ।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে