প্রকাশিত : ২৫ মার্চ, ২০১৯ ০৩:২৯
গঙ্গাচড়ায় একই পদে ভাবী-ননদের চাকুরী

ভাইকে স্বামী বানিয়ে বোনের বেতন উত্তোলনের অভিযোগ

শিক্ষা অফিসারের উৎকোচ বানিজ্য
গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
ভাইকে স্বামী বানিয়ে বোনের বেতন উত্তোলনের অভিযোগ

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ভাবী ও ননদের চাকুরী করা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। ভাবীকে টেক্কা দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের যোগসাজসে ভাইকে স্বামী বানিয়ে বোনের বিরুদ্ধে বেতন উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভাবী এখন পাগলের মত বিলাপ করছে। এলাকাবাসী ও সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের উত্তর পানাপুকুর কাচারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০০১ সালের ১১ জুন যোগদান করেন ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা মোজাহেদুল ইসলামের স্ত্রী শামিমা আকতার। তিনি চাকুরী করার কিছুদিন পর বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক শামিমাকে জানায়, আপনার কর্মরত পদটিতে বিজ্ঞান বিভাগের লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশ হওয়ায় আপনাকে ওই পদ থেকে বাদ দেওয়া হবে। চাকুরী বাঁচার তাগিদে শামিমা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ ননদ রেজিয়ার সার্টিফিকেট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পূণরায় জমা দিয়ে ওই নামে চাকুরী করে আসেন। সরকার সারাদেশের বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয় করণ করলে উক্ত বিদ্যালয়টি জাতীয় করণ হিসেবে গ্রেজেড ভুক্ত হয়। এ সংবাদটি ননদ রেজিয়া জানতে পেরে ভাবীকে সরিয়ে কিভাবে নিজে ওই পদে যোগদান করবেন সে চেষ্ঠায় লিপ্ত হয়। একই পদে চাকুরী নিয়ে শুরু হয় ভাবী-ননদের দ্বন্দ্ব। শেষ পর্যায় বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় গড়ায়। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) কামরুজ্জামান ৪২.২৩.০০০০০.১২৩.১৫.০০৫.৩১২/(অংশ১) স্বারকে শামিমা আকতার এর স্থলে রেজিয়া হওয়ায় তা সংশোধনের জন্য ২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর একটি পত্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। ওই পত্রের কোন সুরাহা না হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে রেজিয়া বেগম উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম আসাদুজ্জামানের সাথে যোগসাজস করে তাকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী হতে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং ফেব্রুয়ারী মাসে বকেয়া বেতন-ভাতাদীর প্রায় ৭ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেন। শামিমা আকতার বলেন তার স্বামী বিদ্যালয়ের জমি দাতা এবং তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকুরীর শুরুতে তিনি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হন। সে সময় বুঝতে না পেরে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাশে চাকুরী হবে না সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের এ কথায় চাকরী রক্ষার তাগিদে হারাগাছের বাসিন্দা বর্তমানে রংপুর শালবন মিস্ত্রিপাড়ায় বসবাসরত আশরাফুলের স্ত্রী আমার ননদ রেজিয়ার বিজ্ঞান বিভাগে পাশের এসএসসি সার্টিফিকেট জমা দিয়ে চাকুরী করে আসছিলেন। বিদ্যালয় সরকারী হওয়ায় নিজ নামটি সংশোধনের অনেক চেষ্টা করেছেন। দীর্ঘ ১৮ বছর বিনা বেতনে চাকুরী করে অনেক কষ্টের ফসল ননদ রেজিয়া লোভে পড়ে বকেয়া বেতন ভাতাদীর প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা জনৈক এক সহকারী শিক্ষকের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে উৎকোচ দিয়ে ভাইকে স্বামী বানিয়ে আমার পরিশ্রমের ফসল ভোগ করে আসছেন। তিনি বিষয়টি দ্রুত তদন্তর জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। রেজিয়া বেগম এ বিষয়ে বলেন তিনি প্রথম থেকে চাকুরী করে আসছেন এবং স্বামী হিসেবে ভাইয়ের নাম সংশোধন করে নিজ স্বামী আশরাফুল করেছেন। উৎকোচ কাউকে দেন নাই বলেও জানান। বিদ্যালয়ের সভাপতি মহব্বত হোসেন এ বিষয়ে শামিমার চাকুরীর কথা স্বীকার করে বলেন, পরে শামিমাকেই রেজিয়া বেগম স্বামী মোজাহেদুল ইসলাম ঠিক রেখে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয় সরকারী হওয়ার পর শামিমার ননদ রেজিয়া চলতি বছর থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। স্বামীর স্থলে ভাইয়ের নাম সংশোধন হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার গোলাম আসাদুজ্জামান উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন রেজিয়া বেগমকে বেতন ভাতা প্রদান করা হয়েছে।

উপরে