আগামী বাজেট থেকে দেশের সব প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে বলেছেন, সরকার আগামী বাজেট থেকে দেশের সব প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদান করবে।
‘আগামী বাজেট থেকে দেশের যত প্রতিবন্ধী রয়েছে তাঁদেরকে আমরা ভাতা প্রদান করবো, ইনশাল্লাহ,’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার ১০ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭০০ টাকা হারে ভাতা প্রদান করছে এবং সেন্সাস রিপোর্ট অনুযায়ী দেশে এখন ১৪ লাখ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী রয়েছে। যারা আগামীতে ভাতার আওতায় আসবে।
শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ১২তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০১৯ উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ পরিচর্যা পেলে স্বাভাবিকভাবে জীবনে সকলের সঙ্গে মিলে চলতে পারবে।
অটিজম আক্রান্ত শিশুরা কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রে পারদর্শী হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের মাঝে যে সুপ্ত জ্ঞান এবং প্রতিভা থাকে, সেটাকেও কাজে লাগাতে হবে।
শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের মেধাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁদেরকে আপনারা যদি একটু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে তাঁদের জীবনটাও অর্থবহ হয়। তারা যতটুকু সুযোগ পায় সেটাকে কাজে লাগাতে পারে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য তাঁর সরকার এসএসসি এবং এইচ এস সি পরীক্ষায় আধাঘন্টা সময় বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যতটা সময় পায় তাঁর থেকে প্রতিবন্ধীরা একটু বেশি সময় পায় এই জন্য যে, তাঁরা যেন পরীক্ষাটা ঠিকমত দিতে পারে। কারণ, তারা অন্য সবার মত একই সঙ্গে লিখে শেষ করতে পারে না।
সরকার প্রধান বলেন, তাঁর সরকার সবসময়ই চায় প্রতিবন্ধীরা কোনভাবেই যেন সমাজের বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, তাদেরকে কেউ যেন বোঝা মনে না করে। কারণ, তাঁদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এসময় ‘মুক্ত পানি’ মিনারেল ওয়াটারের বোতল হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানের সবাইকে দেখিয়ে বলেন, এটিও কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধীরাই তৈরী করছে।’ তিনি এই পানি কেনার জন্যও সকলের প্রতি আহবান জানান।
শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধীদের বহুমুখী প্রতিভার উদাহারণ দিয়ে বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা প্লাস্টিক এবং বেত দিয়ে মোড়া তৈরী করছে, নানা সাংসারিক উপকরণ তৈরী করছে। তিনি সুযোগ পেলেই এগুলো সংগ্রহ করেন এবং ব্যবহার করেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী প্রতি বছর দুই ঈদ এবং নববর্ষের জন্য যে সব শুভেচ্ছা কার্ড পাঠান সেগুলো প্রতিবন্ধীদের চিত্রাংকন থেকেই নির্ধারিত মূল্য দিয়ে সংগ্রহ করা বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের এই চিত্রাংকন থেকে তৈরী কার্ড দিয়ে তাঁর মেয়ে এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন একটি অ্যালবাম তৈরী করেছে। যেটি তাঁর সরকার উপহার স্বরূপও বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাস্থ্য এবং পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেনন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জোয়েনা আজিজ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অটিজম আক্রান্তদের পক্ষে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটিজম আক্রান্ত ৫ জন শিশুকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এবং অটিজম সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনজন ব্যক্তিত্ব এবং তিনটি প্রতিষ্ঠানকেও পুরস্কৃত করেন। তিনি অনুষ্ঠানে নীল বাতিও প্রজ্জ্বলন করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২ এপ্রিলকে বিশ্বব্যাপী অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার।’