প্রকাশিত : ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ১৩:৫৭

মৃত্যুর আগে চাকরিজীবনের টাকা পেতে চান লুৎফর

অনলাইন ডেস্ক
মৃত্যুর আগে চাকরিজীবনের টাকা পেতে চান লুৎফর

রাজবাড়ীর চাকরিচ্যুত লোকোমাস্টার লুৎফর রহমানকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে সকল বকেয়া পরিশোধের নির্দেশনার ৬ বছর অতিবাহিত হলেও কার্যকর হয়নি তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের নির্দেশনা।

১৯৮৫ সালে চাকরিচুত্য করা হয় রাজবাড়ীর লোকোমাস্টার লুৎফর রহমানকে। পরবর্তীতে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট, রাষ্ট্রপতি, রেলপথ মন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র চালাচালি করে চাকরির বৈধতা ফিরে পান লুৎফর রহমান।

সবশেষ ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলীর দেয়া সুপারিশপত্রে তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি তার মন্ত্রণালয়ের ডিজিকে প্রয়োজনীয় নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন।

কিন্তু নির্দেশনার ৬ বছর অতিবাহিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো সুযোগ সুবিধা পাননি লুৎফর রহমান। এ অবস্থায় রেলের জায়গায় জরাজীর্ণ ঘরে অসুস্থ হয়ে জীবনের শেষ সময় পার করছেন তিনি, তার প্রতিবন্ধী ছেলে ও পরিবার। ২০০৫ সালে বিনা চিকিৎসায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান লুৎফর রহমানের স্ত্রী।

লুৎফর রহমানের পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, লোকোমাস্টার লুৎফর রহমান ২২ জুলাই ১৯৮৫ সালে এমএলও নাইনে চাকরিচ্যুত হন। পরবর্তীতে চাকরির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে সিএমএল ১৯৮৬ সালে আবেদন বহাল করে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। হাইকোর্ট ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। ২০০২ সালের ১৩ মার্চ রেল ডিভিশন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। পরবর্তীতে রিভিউ পিটিশন সে আবেদন খারিজ করে দেয়।

এরপর পরিবারটি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে ২০০৯ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন চাকরিচ্যুত লুৎফর রহমান। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সড়ক ও রেলপথ বিভাগ সচিব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৯ অক্টোবর রেলওয়ের মহাপরিচালক সচিবকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেন।

পরে ২০১০ সালের ২ নভেম্বর রেলের মহাপরিচালক মহাব্যবস্থাপক পশ্চিমকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে চাকরি পুনর্বহাল এবং পেনশনের চূড়ান্ত পাওনাদি পরিশোধ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহাব্যবস্থাপক পশ্চিম ২০১১ সালের ৭ মার্চ মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন।

পরবর্তীতে স্থানীয় এমপি কাজী কেরামত আলীর সুপারিশপত্রে তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাকরিচ্যুত লুৎফর রহমানকে সকল সুবিধা দিতে সুপারিশ করেন এবং ১০ সেপ্টেম্বর রেলপথ নীতিমালার আলোকে ডিজিকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পত্র দেন রেলপথ মন্ত্রী। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সমাধান পাননি ভুক্তভোগী পরিবারটি

রেলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আব্দুল জলিলসহ স্থানীয়রা বলেন, লোকোমাস্টার লুৎফর রহমান অত্যন্ত ভালো মানুষ, এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তার পরিবারের অবস্থাও ভালো না। এখন তিনি খুব অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছেন, তার সকল কিছু বুঝিয়ে দেয়া উচিত। সব বুঝে পেলে জীবনের শেষ সময়ে একটু চিকিৎসা করাতে পারবেন তিনি।

লুৎফর রহমানের ছেলে মো. মেহেবুবুর রহমান বলেন, তার বাবা এখন মৃত্যুশয্যায়। ২০০৫ সালের তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। টাকার অভাবে অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা ও ভালো খাবারও দিতে পারছেন না। তিনি নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধী, কোনো রকম টিউশনি করে সংসার চালান এবং রেলের জায়গায় ঘর তুলে কষ্ট করে বসবাস করছেন।

তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান, তার বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় যেন সকল টাকা পান এবং সেই টাকা দিয়ে যেন তার চিকিৎসা করাতে পারেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

লোকোমাস্টার লুৎফর রহমান বলেন, চাকরি জীবনে তার সমস্ত টাকা ফেরত চান। অন্যের দোষ তার ওপর চাপিয়ে অন্যায়ভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এখন অসহায় হয়ে পড়ে আছেন, দেখার কেউ নেই। মৃত্যুর আগে চাকরি জীবনের টাকা পেতে চান তিনি।

উপরে