পাঠাগারটি যেন বইপ্রেমী ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের এক মিলনস্থল
ভাষা শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে ভাষা আন্দোলনের দুই বছর পরে পটুয়াখালী শহরের মহিলা কলেজ রোডে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ স্মৃতি পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাঠাগারটি পরিচয় পেয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের মিলনস্থল হিসেবে।
সেই থেকে বর্তমানে পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও প্রগতিশীল বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে শহীদ স্মৃতি পাঠাগার।
ইতিহাস ঘেটে জানা যায়, ১৯৫৪ সালের ১৭ এপ্রিল পটুয়াখালী শহরের এক দল যুবক প্রতিষ্ঠা করেন পটুয়াখালী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুরো দক্ষিণ অঞ্চলের একমাত্র পাঠাগার হিসেবে রাজত্ব করে এই পাঠাগারটি।
বর্তমানে জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির এবং প্রগতিশীল মানুষকে সংগঠিত করার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এটি। আর এই পাঠাগারের ছাদের নিচেই সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে- জেলা উদিচী শিল্পী গোষ্ঠী, দখিনা খেলাঘর আসর, জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ পাঁচটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পাঠাগার সংশ্লিষ্ঠরা জানান, স্থানীয়দের অনুদানে পাঠাগারটি পরিচালিত হলেও সরকারিভাবে এখানে তেমন কোনো সহযোগিতা করা হয়নি।
এ কারণে নিজস্ব আয় থেকে কষ্টে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে হচ্ছে। তবে এত কিছুর মধ্যেও পাঠাগারে রয়েছে দেশি-বিদেশি বই এর বিশাল এক সংগ্রহশালা।
পাঠাগার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ স্মৃতি পাঠাগার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের নাম এবং অনেকের ছবি এই পাঠাগারের দেয়ালে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে সরাসরি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন।
পটুয়াখালী শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুজ্জামান খান বলেন, ‘বর্তমানে পাঠাগারে সদস্যসংখ্যা প্রায় ২২৫ জন। তবে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এজন্য নিরন্তন কাজ করছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন অর আগের মতো মানুষ বই পড়তে কিংবা নিতে আসে না। তবে এরপরও পাঠাগারের আধুনিকায়নে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কিংবা বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে’।
অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের মাইলফলক হিসেবে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে পটুয়াখালী শহীদ স্মৃতি পাঠাগার- এমটাই প্রত্যাশা এ অঞ্চলের মানুষের।
দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন