প্রকাশিত : ১ জুলাই, ২০২১ ১৬:০৪

লকডাউনের শুরুতেই ফাঁকা চট্টগ্রাম

অনলাইন ডেস্ক
লকডাউনের শুরুতেই ফাঁকা চট্টগ্রাম

সরকারঘোষিত কঠোর লকডাউনের (বিধিনিষেধ) শুরুতে অনেকটাই পাল্টে গেছে চট্টগ্রামের নগরের নিত্যদিনের চিত্র। ব্যস্ততম সড়কে চলাচল করছে না তেমন কোনো গাড়ি। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির উপস্থিতিও কম। ভোরে কারখানাগামী কিছু বাস চলতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটিও কমে গেছে।

এছাড়াও বিভিন্ন সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু রিকশা চলতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনীর, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে।

বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, অক্সিজেন মোড়, ২ নম্বর গেট, টাইগারপাস, নতুন ব্রিজ এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে ৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। এছাড়াও সেনাবাহিনীর ও বিজিবির ছয়টি টিম, র্যাবের ৪-৫টি টিম, পুলিশের ২০টি টিম নগর জুড়ে একযোগে অভিযান পরিচালনা করছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, আমরা সকাল ১০টার দিকে সার্কিট হাউস থেকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা শেষে অভিযান শুরু করেছি। ইতোমধ্যে চার দোকানিকে ও কয়েকজন পথচারীকে অনিয়মের দায়ে জরিমানা করা হয়েছে।

নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ মো. তানভীর বলেন, চট্টগ্রাম নগরের প্রবেশমুখে পুলিশের পাঁচটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। সেখানে বিধিনিষেধের আওতামুক্ত ছাড়া কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। নগরজুড়ে ২০টি টিম লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে।

নগর ট্রাফিক দক্ষিণ পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) মহিউদ্দিন খান বলেন, ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উদ্যোগে নতুন ব্রিজ, টাইগারপাস, নিউমার্কেট এলাকাসহ মোট সাতটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যেসব গাড়ি বের হচ্ছে সেগুলোকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এদিকে লকডাউন দেখতে বের হয়ে সকাল ১০টার দিকে ডবলমুরিং থানা এলাকায় আটক হয়েছেন ২১ জন। এ সময় আটক করা হয় পাঁচটি গাড়ি এবং জরিমানার আওতায় আনা হয় ১০টি গাড়িকে।

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সকাল থেকে ডবলমুরিং থানা এলাকায় একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়াও পাঁচটি টহল টিম কাজ করেছেন। এ সময়ে লকডাউনের অবস্থা দেখতে বের হওয়া ২১ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়াও পাঁচটি গাড়ি আটক ও ১০টি গাড়িকে মামলা দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

তবে কঠোর লকডাউনেও শতভাগ সচল রয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের নিয়ন্ত্রণক চট্টগ্রাম বন্দর। এছাড়াও বন্দরের শুল্কায়নের জন্য খোলা আছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ব্যাংকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন বলেন, কঠোর বিধিনিষেধে বন্দরের কার্যক্রম সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। অপারেশনাল কাজে সবাই যার যার কর্মস্থলে উপস্থিত রয়েছেন। কনটেইনার ওঠানামা হচ্ছে। তবে শুধু যারা বন্দর অফিসে কাজে করেন, তারা নিজেদের মতো ভাগ ডিউটি পালন করছেন। যেখানে ১০ জন দিয়ে কাজ পরিচালনা করা হতো সেখানে তিনজন দিয়ে কাজ চলছে। বিধিনিষেধেও বন্দর সচল রাখতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি আগেভাগে নিয়ে রেখেছি।

জানা গেছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে (বৃহস্পতিবার) ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এ সময় জরুরি সেবা দেয়া দফতর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল-দোকানপাট বন্ধ থাকবে। গণমাধ্যমসহ কিছু জরুরি সেবা এ বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভূত থাকবে।

৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে যারা চলাচল করতে পারবেন তারা হলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জরুরি পরিষেবা, কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কি, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে