প্রকাশিত : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৬:৩২

বাতাসে বাড়ছে ক্ষতিকর উপাদান, উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের

অনলাইন ডেস্ক
বাতাসে বাড়ছে ক্ষতিকর উপাদান, উদ্বেগ বিশেষজ্ঞদের

অপরিকল্পিত শিল্পায়ন-নগরায়ন ও যানবাহনের কালো ধোয়া এবং নিমার্ণকাজে যথাযথ দূষণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাতাসে মিশছে ক্ষতিকর সব উপাদান। প্রতিদিন খারাপ হচ্ছে বাতাসের মান। প্রতিবছর বাতাসে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম) বা অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণার উপস্থিতি বাড়ছে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হারে।

সম্প্রতি শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’-এর প্রকাশিত রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ মাইক্রোগ্রাম পিএম ২ দশমিক ৫ শতাংশ থাকলে তাকে সহনীয় বলা যেতে পারে। সেখানে কখনো দেশে প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২ দশমিক ৫ ছাড়িয়ে যায় ৬০ মাইক্রোগ্রামের উপরে।

বাতাসের এই দূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ। ফুসফুসে ক্যানসার ও কিডনি বিকলের মতো রোগ ছড়াচ্ছে ব্যাপকভাবে।

বাংলাদেশে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন,
‘বায়ুদূষণের কারণে মানুষের অকালমৃত্যু ও স্বাস্থ্যক্ষতি আমাদের মত ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানবিক বিপর্যয় তৈরি করছে। এর ফলে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বায়ুদূষণের ফলে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি সেটা সরকারের উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না। এ কারণে সরকার সমস্যাটাই দেখতে পারছে না।’

তিনি বলেন, ‘কম্প্রিহেনসিভ পরিকল্পনা করতে হবে। যার মধ্যে পরিকল্পনা থাকবে, তথ্য থাকবে ও মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে। তা হলেই কেবল বায়ুদূষণ কমাতে যেকোনো পদক্ষেপ কার্যকর হবে।’

এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-এর তথ্য বলছে, বাতাসের এ দূষণের ফলে মানুষের গড় আয়ু কমছে ৬ বছরেরও বেশি। খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলের বায়ু সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে। ৬৪টি জেলার প্রত্যেকটিতেই বায়ুদূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিনগুণ বেশি।

দূষিত বাতাসে শ্বসনযোগ্য দূষিত কঠিন ও তরল পদার্থ উড়ে বেড়ায়। কাচ, ইটের কনা, ধোঁয়া বা ধুলা, এগুলোকে পিএম ২ দশমিক ৫ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাতাসে এসবের উপস্থিতি উদ্বেগের বলেছেন জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

বাপা সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘পদ্মা নদী নষ্ট হওয়ার কারণে রাজশাহীর বাতাস আগে থেকেই দূষিত হচ্ছে। পরিকল্পনাবিহীন শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা ও ট্রান্সবাউন্ডারি পলিউশনের কারণে এ অঞ্চলের বাতাস প্রচুর দূষিত। ইটভাটা এবং মংলা ও বাগেরহাটের ইন্ডাট্রিয়ালাইজেশনের কারণে খুলনা এলাকার বায়ুদূষণও বাড়ছে।’

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘রাজশাহীতে ইন্টারনাল সোর্সগুলো যেমন- ইটভাটা, গাড়ির কালো ধোয়া কম। শীতকালে ট্রান্সবাউন্ডারি দূষণটা প্রকট হয়। ভারতের হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের দূষিত বায়ু এখানে প্রবাহিত হয়। এর ফলে এখানকার বাতাস বেশি দূষিত হচ্ছে। এমনিতে রাজশাহীতে বায়ূদূষণ কম। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, কক্সবাজারের মতো এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণ এখন বেশি।’

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে