প্রকাশিত : ৪ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৩৪

জেল থেকে বের হয়ে পুলিশ বক্সে বোমা রাখে বাছির

অনলাইন ডেস্ক
জেল থেকে বের হয়ে পুলিশ বক্সে বোমা রাখে বাছির

নব্য জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির (২২) ২০১৭ সালে ফেসবুক ও ইউটিউবের বিভিন্ন ভিডিও পেয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। জঙ্গিবাদে জড়ানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি)।

এক বছর তিন মাস কারাগারে থাকার পর জামিনে বের হয়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করে নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে। এরপর তার যোগাযোগ হয় নব্য জেএমবির সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের সঙ্গে। তাদের দেওয়া নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণে ২০২০ সালের ২৪ জুলাই রাতে পুরাতন পল্টনে পুলিশ চেকপোস্টের পাশে রিমোট নিয়ন্ত্রিত বোমা রেখে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটান বাছির। বুধবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুর বাজার রোড এলাকা থেকে সিটিটিসির ডিসপোজাল টিম ও সিটি ইনভেস্টিগেট টিম বাছিরকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ঢাকা শহরের এমন আরও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল। এসব ঘটনার প্রত্যেকটিরই রহস্য উদঘাটন হয়েছে ও জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ পুলিশ চেকপোস্টে যে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল সেই ঘটনার মূলহোতা আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আবু বাছির।

তিনি বলেন, বাছিরের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায়। তিনি ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৮ সালে তাকে একবার সিটিটিসি গ্রেফতার করে। এক বছর তিন মাস জেলে থেকে জামিন পেয়ে তিনি আবার নতুন করে জঙ্গিবাদে জড়ান। তিনি জেল থেকে বের হয়ে নব্য জেএমবির সামরিক শাখায় কাজ শুরু করেন। নব্য জেএমবির আমির মাহাদী হাসান ওরফে জনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে তার নির্দেশে কাজ করতে শুরু করেন। নব্য জেএমবির একজন সুরা সদস্য আবু মোহাম্মদের তত্ত্বাবধানেও তিনি কাজ করতে থাকেন। আবু মোহাম্মদ তাকে সুবিধাজনক অবস্থানে পুলিশের ওপর হামলা করার জন্য নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম কেনার জন্য টাকা পয়সা দেন।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বাছির প্রথমে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। পরে মাহাদী ও আবু মোহাম্মদ তাকে সেই বাসাটি ছেড়ে একা বাসা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি রাজধানীর মান্ডা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসা থেকেই বাছির হামলার জন্য বোমাটি বানান। পরে সুবিধাজনক স্থান হিসেবে গত বছরের ২৪ জুলাই রাতে পুরান পল্টনের পুলিশ চেকপোস্টে বোমাটি রাখেন। তিনি বোমা রাখার একটি নিরাপদ স্থান খুঁজছিল যেখানে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই। ঢাকা শহরে যতগুলো এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল সবগুলোরই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পাওয়া গেলেও পল্টনের ঘটনাটির কোনো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় তাকে যারা নির্দেশ দিয়েছিল তাদের নাম পেয়েছি। তার আর কোনো জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আছে কি না এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ তাকে আদালতে পাঠানো হবে এবং আমরা ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করবো।

আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা হয়তো সবাইকে মনিটরিং করতে পারিনি বা পারি না, কিন্তু জামিনে বের হওয়া অধিকাংশ জঙ্গিদের আমরা নানা কৌশলে মনিটরিং করি। বাছিরও আমাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে ছিল কিন্তু তিনি হঠাৎ করে মান্ডা এলাকায় চলে যাওয়ায় আমাদের নজরদারিতে ছিলেন না। তোপখানা রোডে যখন তিনি থাকতেন তখন আমাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে ছিল।

জামিনে বের হওয়া কতজন জঙ্গি সিটিটিসি নজরদারিতে রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০০১ সাল থেকে ধরলে অনেক জামিন পাওয়া জঙ্গি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। জামিন পাওয়ার পর আমরা প্রথম যে বিষয়টি দেখি, যেকোনো জঙ্গি তার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে বা আবার পুনরায় সংগঠনের কাজ-কর্মে যুক্ত হয়েছে। আমরা যাকে মনে করি নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন তাকে আমরা নজরদারিতে রাখি।

কারাগারে যেসব জঙ্গি রয়েছে তাদের নজরদারির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কারাগারে আমরা নজরদারি করতে পারি না, কারণ আমাদের সেই অনুমতি নেই। তবে আমরা কারাগারে নজরদারি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি। কীভাবে কারাগারে থাকা জঙ্গিদের ডি-রেডিকালিজেশন করা যায় এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো। আশা করছি, এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক সাড়া পাবো।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন

উপরে