প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২২ ১৭:২১

হজ প্যাকেজ ঘোষণা, খরচ বাড়লো লাখ টাকার বেশি

অনলাইন ডেস্ক
হজ প্যাকেজ ঘোষণা, খরচ বাড়লো লাখ টাকার বেশি

চলতি বছর হজে যেতে সরকারিভাবে দুটি প্যাকেজ ও বেসরকারিভাবে একটি প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘোষিত প্যাকেজ অনুযায়ী, এবার হজযাত্রায় প্রত্যেক হজযাত্রীর লাখ টাকারও বেশি বাড়তি খরচ হবে।

বুধবার (১১ মে) সচিবালয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়।

সভা শেষে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সাংবাদিকের হজ প্যাকেজ সম্পর্কে ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে হজে যেতে প্যাকেজ-১ এ ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ এবং প্যাকেজ-২ এ ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে একটি প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৩০ টাকা।

প্যাকেজ-১ এর ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে এক লাখ ২ হাজার ৩৪০ টাকা, প্যাকেজ-২ এর ক্ষেত্রে এবার খরচ বেড়েছে ১ লাখ ২ লাখ ১৫০ টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি সরকারের বিধিনিষেধের মুখে গত দুই বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীরা হজ পালন করতে পারেননি।

সবশেষ ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন হজযাত্রীরা। ২০২০ সালে প্যাকেজ ঘোষণা হলেও বাংলাদেশ থেকে কেউ হজে যেতে পারেননি। তখন হজ পালনে প্যাকেজ-১ এ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং প্যাকেজ-২ এ খরচ ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্যাকেজ-৩ এর খরচ ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীর জন্য ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩০ টাকার প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজ এজেন্সিরা সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ ও প্যাকেজ-২ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করতে পারবে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরবে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক হজচুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ থেকে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জনসহ মোট ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজযাত্রী পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গমনের সুযোগ পাবেন। হজযাত্রীর বিমান ভাড়া, সৌদি আরবের বাড়ি ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, মুয়াল্লিম ফি জমজমের পানি, খাবার খরচ এবং অন্যান্য ফি হিসাব করে ২০২২ সালের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য দুটি প্যাকেজ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার এজেন্সিগুলোর জন্য একটি প্যাকেজের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে সৌদি সরকারের হজের ঘোষণা দিতে দেরি এবং এখন পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে জনপ্রতি প্রকৃত খরচের বিবরণী না পাওয়ায় সম্ভাব্য ব্যয় বিবেচনা করে ধর্ম মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যবস্থাপনা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করেছে। প্রস্তাবিত প্যাকেজ হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদিত হয়েছে।

হজ প্যাকেজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পর্বে ব্যয় বাড়েনি জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২০ সালে সৌদি রিয়ালের বিনিময় হার ছিল ২৩ টাকা। আজ এই হারের পরিমাণ ২৪ টাকা ৩০ পয়সা। এটিও প্যাকেজ মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এছাড়া সৌদি আরব পর্বে সব খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ কর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মোয়াচ্ছাছার খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। বাড়ি ভাড়া বেড়েছে। প্যাকেজ মূল্যবৃদ্ধির জন্য এ কারণগুলো দায়ী। এ বছর তৃতীয় প্যাকেজ রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০২০ সালের তিনটি প্যাকেজের যে কোনোটিতে নিবন্ধিত হজযাত্রীকে ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত প্যাকেজ-১ অথবা প্যাকেজ-২ এর যে কোনো একটি প্যাকেজ নির্বাচন করে প্যাকেজ স্থানান্তরের মাধ্যমে ২০২২ সালের নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ই-হজ সিস্টেমে প্যাকেজ স্থানান্তরের এ অর্থ প্রাপ্তি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করবে। অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে হজযাত্রীকে ই-হজ সিস্টেম থেকে তার পিলগ্রিম আইডি প্রদান করা হবে।

তিনি আরও বলেন, যদি কোনো কোটা খালি থাকে, তাহলে অবশিষ্ট কোটা পূরণের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনের ক্রম অনুসারে হজ পরিচালকের অনুমোদনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধন করতে পারবেন। ২০২০ সালে যে সব নিবন্ধিত হজযাত্রী প্যাকেজ স্থানান্তরের মাধ্যমে ২০২২ সালে নিবন্ধন চূড়ান্ত করবেন না বা হজে যেতে পারবেন না, তাদের হজ নিবন্ধন বাতিল হবে এবং তারা বিধি মোতাবেক দেওয়া অর্থ ফেরত পাবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারি ব্যবস্থাপনার প্যাকেজ-১ এর হজযাত্রীরা পবিত্র মসজিদুল হারাম চত্বরের সীমানা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ মিটারের মধ্যে এবং প্যাকেজ-২ এর হজযাত্রীরা সর্বোচ্চ ১৫০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করবেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, বিমানের টিকিট বাবদ নেওয়া অর্থ এজেন্সি ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারবে না। হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী সরাসরি পে-অর্ডারে মাধ্যমে এয়ারলাইন্সকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে এবং সৌদি আরবের বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ ও পরিবহন বাবদ গৃহিত অর্থ আইবিএসএন (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার) এর মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠানো ছাড়া এজেন্সি উত্তোলন করতে পারবে না। এ বছর রুট টু মক্কা ইনিশিয়াটিভের আওতায় ঢাকার হজযাত্রীদের শতভাগ হজযাত্রীর সৌদি আরবের প্রি-এরাইভাল ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রত্যেক হজ এজেন্সি কমপক্ষে ১০০ জন এবং সর্বোচ্চ ৩০০ জন হজযাত্রী পাঠাতে পারবে। হজ এজেন্সি ছাড়া অন্য কোনো এজেন্সির কাছে হজযাত্রীর বিমান টিকিট বিক্রির জন্য অনুমতি দেওয়া যাবে না। কোনো হজ এজেন্সিকে কোনো অবস্থায়ই ৩০০ এর অধিক টিকিট দেওয়া যাবে না।

প্রতি ৪৪ জন হজযাত্রীর জন্য একজন করে গাইড নিয়োগ করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের কোরবানি বাবদ ব্যয়ের অর্থ সৌদি ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা সৌদি সরকার অনুমোদিত এ ধরনের অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করার জন্য সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য হজযাত্রীকে প্যাকেজ মূল্যের অতিরিক্ত ৮১০ রিয়াল সমপরিমাণ ১৯ হাজার ৬৮৩ টাকা সঙ্গে নিতে হবে।

দৈনিক চাঁদনী বাজার / সাজ্জাদ হোসাইন 

উপরে